আল্লাহর কিছু বানী ও আদেশ নিষেধ

আল্লাহর বানী ও আদেশ নিষেধ

আল্লাহ সমস্ত জীবনকে নির্দেশ দেন এবং নির্দেশ ব্যতীত কাজ করা নিষেধ। কিছু আদেশ এবং নিষেধ নিচে উল্লেখ করা হলো: সত্য বলুন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কথা বলবেন না। কখনও কারো জীবন ধ্বংস না করুন । আল্লাহ কোরআনে বলেন, "কেউ একটি জীবন ধ্বংস করলে সে সমস্ত মানবজাতি ধ্বংস করে, কুরআনে আল্লাহ বলেছেন,"হে মানুষগণ! তোমরা সত্যি আল্লাহর দিকে তাকাবে। এবং রসূলের (মুহাম্মদ সাঃ) পাশে থাকো এবং সুন্নত অনুসরণ কর। তাহলে তোমরা রহমত পাবে।" [সূরা আল-আরাফ ৭: ২০০]এছাড়াও, কুরআনে আল্লাহ বলেছেন,"আল্লাহ আমাদেরকে নেক কাজ করতে আদেশ দেনেছেন এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেছেন। এবং তাঁর নেক প্রকাশের জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেনেছেন। আল্লাহ সব জানে এবং সব জানা কিছুর পাশাপাশি।" [সূরা আল-বাকারা ২: ২০২]

আল্লাহর কিছু বানী ও আদেশ নিষেধ

ক্রয়-বিক্রয়ের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ

আরবী 'বাই' শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ ‘ক্রয়-বিক্রয়'। ‘বাই' শব্দটি একই সাথে 'ক্রয়-বিক্রয়' উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়। পরিভাষায় ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মতিক্রমে দুটি বস্তুর পরস্পর বিনিময়কে 'ক্রয়-বিক্রয়' বলা হয়। ক্রয়- বিক্রয়ের গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেন- ‘উত্তম উপার্জন হচ্ছে কল্যাণকর ক্রয়-বিক্রয়।' (মুসনাদে আহমাদ : ১৫২৭৬) ক্রয়-বিক্রয় চার প্রকার, যথা: সহীহ, ফাসিদ, মাকরুহ ও বাতিল। নিম্নে এগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো-

সহীহ

যে ক্রয়-বিক্রয় মৌলিক ও আনুষঙ্গিক উভয় বিচারে শুদ্ধ । মৌলিক বলতে বুঝায় ক্রয়-বিক্রয়ের রুকন বিদ্যমান থাকা। আর অনুষঙ্গিক বলতে বুঝায় রুকনের পরিপূরক বিষয়সমূহ, যেমন ইজাব কবুলের সময় দ্রব্য বা বিনিময়ের পরিমাণ ঊহ্য না রাখা, বিনিময় পরিশোধের অনির্দিষ্ট মেয়াদ ধার্য করা, পণ্য তাৎক্ষণিকভাবে ক্রেতাকে সোপর্দ করা যায় এরূপ না হওয়া, বিনিময়-চুক্তির স্বাভাবিক চাহিদার বিপরীত কোনো শর্ত আরোপ না করা ইত্যাদি। এ প্রকার ক্রয়-বিক্রয়ের হুকুম হলো, ইজাব কবুল হবার সাথে সাথে ক্রেতার পণ্যের আর বিক্রেতা বিনিময়ের মালিক হয়ে যাবে ।

ফাসিদ

যে ক্রয়-বিক্রয় মৌলিকত্বের বিচারে শুদ্ধ; কিন্তু আনুষঙ্গিক বিচারে অশুদ্ধ। যেমন বিক্রীত পণ্য কিছু দিনের জন্য বিক্রেতার ভোগ-ব্যবহারে থাকবে। ক্রয়-বিক্রয়ের স্বাভাবিক চাহিদার বিপরীত এ ধরনের কোনো শর্ত আরোপ করা, যেদিন তুফান আসবে সেদিন মূল্য পরিশোধ করবে বিনিময় পরিশোধের মেয়াদ এরূপ অনির্দিষ্টভাবে ধার্য করা ইত্যাদি। এ প্রকার ক্রয়- বিক্রয়ের হুকুম হলো, ইজাব কবুলের পর ক্রেতা পণ্যদ্রব্য করায়ত্ত করে নিলে সে তার মালিক হবে। তবে বিক্রয় চুক্তি ভেঙ্গে ফেলাই ক্রেতা- বিক্রেতা উভয়ের কর্তব্য নতুবা তা সুদি কারবার বলে গণ্য হবে।

মাকরুহ

ক্রয়-বিক্রয় মৌলিক ও আনুষঙ্গিক উভয় বিচারে শুদ্ধ কিন্তু এ সম্পর্কে হাদীসে কোনো নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যেমন জুমার দ্বিতীয় আযানের সময় ক্রয়-বিক্রয় করা। এ প্রকার ক্রয়-বিক্রয়ের হুকুম হলো, ক্রয়-বিক্রয় হয়ে যাবে তবে উভয়ে গুনাহগার হবে।

বাতিল

ক্রয়-বিক্রয় মৌল বিবেচনাতেই অশুদ্ধ। যেমন মাল নয় এমন জিনিস উদাহরণত লাশ, স্বাধীন মানুষ ইত্যাদি বিক্রয় করা। কার্যকারিতার বিচারে ক্রয়-বিক্রয় আবার দুই প্রকার ১. কার্যকারী ও ২. অকার্যকারী। এ প্রকারকে আবার মাওকুফ বলে।

মাওকুফ

ক্রয়-বিক্রয় মৌলিক ও আনুষঙ্গিক বিচারে শুদ্ধ কিন্তু পণ্যদ্রব্য অন্যের মালিকানাধীন। এ প্রকারের ক্রয়-বিক্রয়ের হুকুম হলো, মালিক সম্মত হলে তা কার্যকর হবে, নচেৎ বাতিল হয়ে যাবে। পণ্যের দিকে লক্ষ রেখেও ক্রয়- বিক্রয় চার প্রকার: মুকায়াযা, সরফ, সালাম ও মুতলাক ।

মুকায়াযা

দ্রব্যের বিনিময়ে দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করা, যেমন খাদ্যদ্রব্যের বিনিময়ে কাপড় বিক্রি করা।

সরফ

মুদ্রার বিনিময়ে মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করা যেমন স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে রৌপ্যমুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করা ।

মুতলাক

নগদ হোক কিংবা বাকি হোক মুদ্রার বিনিময়ে পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করা যেমন টাকার বিনিময়ে খাদ্যদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করা।

সালাম

দ্রব্য বাকি রেখে অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করা যেমন উৎপাদনের পর উৎপাদনকারী ক্রেতাকে এক মণ ধান প্রদান করবে, সে বাবদ মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করা। মূল্যের দিক থেকে বাই চার প্রকার: মুসাওয়ামাহ, মুরাবাহা, তাওলিয়াহ ও ওয়ীয়া ।

মুসাওয়ামাহ

ক্রয়-বিক্রয়ে বিনিময় হার ধার্য করার ক্ষেত্রে ক্রয়মূল্যের প্রতি লক্ষ থাকে না বরং দর কষাকষির পর ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মতিতে যে মূল্য ধার্য হয়, তাই বিনিময়মূল্য হয়ে থাকে ।

মুরাবাহা

যে ক্রয়-বিক্রয়ে বিনিময় হার ধার্য করার ক্ষেত্রে ক্রয় মূল্যের প্রতি লক্ষ থাকে এবং ক্রয় মূল্যের চেয়ে কিছুটা লাভে বিক্রয় করা হয়। যেমন দশ টাকায় কোনো দ্রব্য ক্রয় করে বার টাকায় বিক্রি করা ।

তাওলিয়াহ

যে ক্রয়-বিক্রয়ে বিনিময় হার ধার্য করার ক্ষেত্রে ক্রয়মূল্যের প্রতি লক্ষ থাকে এবং ক্রয়মূল্যেই পণ্য বিক্রয় করা হয়। যেমন দশ টাকায় কোনো দ্রব্য ক্রয় করে দশ টাকায় বিক্রি করা।

ওযীয়া

লোকসানে কোনো জিনিস বিক্রয় করাকে ওষীয়া বলা হয় ।

ক্রয়-বিক্রয়ের শর্তাবলি

ক্রয়-বিক্রয়ের নীতিমালা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেন- ‘মুসলমান নিজেদের পারস্পারিক শর্ত মেনে চলবে কিন্তু হারাম শর্তকে হালাল আর হালাল শর্তকে হারাম করবে না।' (দারে কুতনি : ২৯৩১) ক্রয়-বিক্রয়ে কিছু শর্ত রয়েছে সে শর্তগুলো মেনে চলা জরুরি। নিম্নে শর্তগুলো পেশ করা হলো-

আল্লাহ তায়লার আর ও আদেশ নিষেধ

ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই বিবেকসম্পন্ন হতে হবে। পাগল কিংবা নির্বোধের লেনদেন গ্রহণযোগ্য নয় । বিক্রয় পণ্য ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী হতে হবে। বিক্রয় পণ্য প্রদানযোগ্য হতে হবে। বিক্রয় পণ্য মজুদ হতে হবে । বিক্রয় পণ্য মূল্যবান হতে হবে। বিক্রীতব্য বস্তুটি অপবিত্র হবে না। বিক্রেতাকে সওদা হস্তান্তর করার ক্ষমতাসম্পন্ন হতে হবে। বস্তুটির পরিমাণ ও গুণাবলি সম্পর্কে জ্ঞাত হতে হবে । ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে । বিক্রীত মাল নির্দিষ্ট হতে হবে। ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ সুদমুক্ত হতে হবে। স্থানান্তরযোগ্য মাল ক্রেতার হস্তগত হতে হবে। বিক্রীত মালের বিক্রয়মূল্য নির্দিষ্ট হতে হবে। ক্রয়-বিক্রয়ে ইজাব কবুলের সামঞ্জস্য হতে হবে। ক্রয়-বিক্রয়ে দুটি পক্ষ থাকতে হবে । আল্লাহ আত্মহত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ আইনের দাবি ব্যতিরেকে কাউকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ অন্যের অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ আমানতের খিয়ানত করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ মাপ ও ওজনে ঠকাতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ সুদ, ঘুষ, জুয়া ও মওজুদদারী নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ চুরি-ডাকাতি নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ অপব্যয়-অপচয় নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ যুলম-অত্যাচার নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ অহংকার নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ রিয়া নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ গীবাত নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ অপবাদ নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ মিথ্যা কথা বলা নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ গান-বাজনা নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ প্রাণীর ছবি আঁকা নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ বিবাহ বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ সকল প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীল কাজ নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ প্রবৃত্তির আনুগত্য নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ আম্মা, দুধ মা, খালা, ফুফু, বােন, দুধ বােন, কন্যা, স্ত্রীর পূর্ব স্বামীর ঔরশজাত কন্যা, ভাতিঝি, ভাগিনী, শ্বাশুড়ী, পুত্রবধূ, একত্রে দুই বােন, একত্রে ফুফু-ভাইঝি এবং একত্রে খালা-বােনঝিকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ মুশরিক নারীকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ সামাজিক পবিত্রতা ও সুস্থতার জন্য আল হিজাব বা পর্দার বিধান নাযিল করেছেন। আল্লাহ মদ ও মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ শর নিক্ষেপ করে ভাগ্য গণনা নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ গণকের কথায় বিশ্বাস স্থাপন নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ মরা পশুর গােশত, শূকরের গােশত, রক্ত, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারাে নামে যবাইকৃত পশু, কষ্ঠরুদ্ধ হয়ে আহত হয়ে ওপর থেকে পড়ে মৃত পশু, হিংস্র জন্তু কর্তৃক নিহত পশু এবং কোন বেদীতে উৎসর্গীকৃত পশুর গােশত খাওয়া নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ নখযুক্ত ও হিংস্র জন্তু খাওয়া নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ জ্ঞান অর্জন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ আলকুরআনের আয়াতগুলাে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ মহাবিশ্বকে নিয়ে চিন্তা-গবেষণার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ হালাল জীবিকা অন্বেষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ একমাত্র তাকে ভয় করে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ একমাত্র তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল করার নির্দেশ দিয়েছেন । আল্লাহ সকল নেক কাজ একমাত্র তাঁর সন্তোষ হাছিলের অভিপ্রায়ে (নিয়াতে) সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর অধিকার যে মানুষ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হবে। এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ একনিষ্ঠভাবে তাঁর নির্দেশগুলাে মেনে চলবে। এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজগুলাে পরিহার করবে। এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষের সকল ত্যাগ-কুরবানী একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত হবে। এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষের মাথা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে নত হবে। এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ একমাত্র আল্লাহর ওপরই ভরসা করবে। এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ একমাত্র আল্লাহর নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করবে। এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ আল্লাহর আনুগত্যের সাথে সাংঘর্ষিক কোন আনুগত্য মেনে নেবে না। এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করবে।

Next Post
No Comment
Add Comment
comment url