কিয়ামত হাসর জান্নাত জাহান্নাম

কিয়ামত হাসর জান্নাত জাহান্নাম

আল্লাহ মানুষকে দুর্বল রূপে সৃষ্টি করেন, যৌবনে তাকে শক্তিমান করেন, বার্ধক্যে আবার তাকে দুর্বলতার শিকারে পরিণত করেন।আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যুক্ষণ নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। সেই নির্দিষ্ট ক্ষণেই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। দুর্ভেদ্য দুর্গের ভেতর লুকিয়েও মৃত্যু থেকে রেহাই পাওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহর নূর পৃথিবীময় ঝলমল করতে থাকবে। প্রচণ্ড উত্তাপে ও আতংকে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়বে । আল্লাহর অনুগত বান্দারা ‘আলকাউসারের' সুমিষ্ট ও শীতল পানি পান করে পিপাসা দূর করবে। যারা দুনিয়ায় আল্লাহর অবাধ্যতা করেছে তাদেরকে ‘আলকাউসারের' কাছে ঘেঁষতে দেয়া হবে না । আল্লাহর আদালতে সারিবদ্ধভাবে মানুষ দাঁড়িয়ে যাবে। একদিকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যাবেন ফেরেশতারা ।

কিয়ামত হাসর জান্নাত জাহান্নাম

কিয়ামতঃ-

আল্লাহর অধিকার যে মানুষ আল্লাহকেই সবচে' বেশি ভালোবাসবে। এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ তার প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের জন্যই করবে । যেই জনগোষ্ঠী স্বেচ্ছায় আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানের নিরিখে তাদের গোটা সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলে আল্লাহ তাদের জন্য আসমান ও পৃথিবীর বারাকাতের দুয়ার খুলে দেন। অর্থাৎ আল্লাহ তাদেরকে প্রভূত কল্যাণ, উন্নতি ও সমৃদ্ধি দান করেন। আল্লাহ তাঁর অনুগত বান্দাদেরকে উত্তম রিক দান করেন। আল্লাহ তাঁর না-ফরমান বান্দাদেরকে পেরেশানী-যুক্ত জীবিকা দেন । আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছা ও কর্ম-প্রচেষ্টার স্বাধীনতা দিয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন।যেই ব্যক্তি আল্লাহর আদেশানুবর্তী জীবন যাপন করে সে কামিয়াব। যেই ব্যক্তি স্বেচ্ছাচারী জীবন যাপন করে সে ব্যর্থ । আল্লাহ নিজেই সকল মানুষের কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করছেন। আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তির সংগে দুইজন ফেরেশতাকে সংশ্লিষ্ট করে দিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা অবিরাম মানুষের সকল তৎপরতার বিবরণ লিপিবদ্ধ করে চলছেন । আল্লাহ মানুষকে দুর্বল রূপে সৃষ্টি করেন, যৌবনে তাকে শক্তিমান করেন, বার্ধক্যে আবার তাকে দুর্বলতার শিকারে পরিণত করেন।আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যুক্ষণ নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। সেই নির্দিষ্ট ক্ষণেই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। দুর্ভেদ্য দুর্গের ভেতর লুকিয়েও মৃত্যু থেকে রেহাই পাওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ বর্তমান মহাবিশ্বকে অনন্তকালের জন্য সৃষ্টি করেন নি আল্লাহ বর্তমান বিশ্ব-ব্যবস্থাকে ভেংগে দেয়ার জন্য একটি দিন-ক্ষণ নিৰ্দিষ্ট করে রেখেছেন । আল্লাহর নির্দেশে সেই দিন অন্যতম ফেরেশতা ইসরাফীল (আ) তাঁর বিশাল শিংগায় ফুঁ দেবেন । শিংগার আওয়াজ উত্থিত হওয়ার সংগে সংগে আসমান ও পৃথিবী থরথর করে কেঁপে উঠবে আল্লাহ যেই মহাকর্ষ বলের দ্বারা মহাবিশ্বের সব কিছুকেই পরস্পর সম্পর্কিত রেখেছেন তা ছিন্ন করে দেবেন। কোটি কোটি তারকা, গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু ইত্যাদি সব কিছু ছিটকে পড়বে। পাহাড়-পর্বত টুকরো টুকরো হয়ে উড়তে থাকবে। সাগরগুলো উৎক্ষেপিত হবে। আসমান, পৃথিবী ও এদের মধ্যকার সব কিছু ভেংগে চুরমার হয়ে যাবে । সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে । একমাত্র আল্লাহই বিদ্যমান থাকবেন। অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে নতুন আকারে, নতুন বিন্যাসে মহাবিশ্ব অস্তিত লাভ করবে। আল্লাহর নির্দেশে বড়ো আকারে নতুন পৃথিবী গড়ে উঠবে ।

হাসর

নতুন পৃথিবী হবে এক বিশাল, সমতল, ধূসর প্রান্তর। ‘আলকাউসার’ নামে একটি জলাধার ছাড়া আর কিছু থাকবে না সেই সুবিস্তৃত ময়দানে। আল্লাহর অনুগ্রহে আলকাউসারের পানি হবে দুধের মতো সাদা ও মিসকের চেয়েও বেশি সুগন্ধযুক্ত । আল্লাহ প্রতিটি গলিত লাশের পরমাণুগুলোর কোনটি কোথায় অবস্থান করে একটি কিতাবে তার বিবরণ সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহ মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ মাটিতেই মানুষকে ফিরিয়ে নেন। আল্লাহ এই মাটি থেকেই মানুষকে জীবিত করে উঠাবেন। আল্লাহর নির্দেশে ইসরাফীল (আ) আবার শিংগায় ফুঁ দেবেন। আল্লাহর নির্দেশে সকল মানুষ জীবিত হয়ে উঠে দাঁড়াবে এবং বিস্ময়ভরা চোখে এদিক ওদিক তাকাতে থাকবে। আল্লাহর নূর পৃথিবীময় ঝলমল করতে থাকবে। প্রচণ্ড উত্তাপে ও আতংকে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়বে । আল্লাহর অনুগত বান্দারা ‘আলকাউসারের' সুমিষ্ট ও শীতল পানি পান করে পিপাসা দূর করবে। যারা দুনিয়ায় আল্লাহর অবাধ্যতা করেছে তাদেরকে ‘আলকাউসারের' কাছে ঘেঁষতে দেয়া হবে না । আল্লাহর আদালতে সারিবদ্ধভাবে মানুষ দাঁড়িয়ে যাবে। একদিকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যাবেন ফেরেশতারা । আল্লাহর নির্দেশে যেইসব ফেরেশতা মানুষের তৎপরতার বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁরা তা পেশ করবেন । আল্লাহর নির্দেশে প্রত্যেকের হাতে প্রত্যেকের আমলনামা তুলে দেয়া হবে । আল্লাহর অনুগত বান্দারা ডান হাতে তাদের আমলনামা গ্রহণ করবেন। আল্লাহর অবাধ্য বান্দারা হাত পেছনে নিয়ে গেলেও আমলনামা হাতে নিতে বাধ্য হবে। আল্লাহ ঘোষণা করবেন : ‘তোমার আমলনামা পড়' । প্রত্যেক ব্যক্তি দেখতে পাবে তার কৃত প্রতিটি কাজের বিবরণ নিখুঁতভাবে নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আল্লাহ মানুষকে তার জীবনকাল সে কিভাবে কাটিয়েছে সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন । আল্লাহ মানুষকে তার দেহসত্তায় যেইসব শক্তি দান করেছেন সেইগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন । আল্লাহ মানুষকে যেই জ্ঞান দান করেছেন তার ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আল্লাহ মানুষকে যেইসব অর্থ-সম্পদ দান করেছেন তার ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আল্লাহ মানুষকে যেইসব ক্ষমতা-ইখতিয়ার দিয়েছেন সেইগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আল্লাহ মানুষকে যেইসব আদেশ-নিষেধ করেছেন সেইগুলোর পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আল্লাহ মানুষকে অপরাপর মানুষের তত্ত্বাবধান করার যেই দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আল্লাহর নির্দেশে মানুষের হাত ও পা সাক্ষ্য দেবে তাদেরকে কোন্ কোন্ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহর নির্দেশে মানুষের জিহ্বা, কান, চোখ ও ত্বক সাক্ষ্য দেবে তাদেরকে কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহর নির্দেশে মানুষের অন্তর সাক্ষ্য দেবে কখন কোন্ চিন্তা তার মাঝে লালিত হয়েছে। মানুষের দুনিয়ার জীবনের সকল কর্মকাণ্ডের চুলচেরা বিশ্লেষণের পর আল্লাহ যাদেরকে শাস্তি দেবার সিদ্ধান্ত নেবেন তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেবেন। আল্লাহ যাদেরকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নেবেন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করার নির্দেশ দেবেন । আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ তাঁর কাছে কারো মুক্তির জন্য শাফাআত বা সুপারিশ করতে পারবেন না । আল্লাহ যাঁকে শাফাআত করার অনুমতি দেবেন তিনি কেবল ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে শাফাআত করতে পারবেন যার জন্য শাফাআত করার অনুমতি দেয়া হবে । আল্লাহর অনুমতিক্রমে নবী-রাসূল, শহীদ ও তাঁর অন্যান্য প্রিয় বান্দারা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য শাফাআত করলে আল্লাহ অনুগ্রহ করে তা কবুল করবেন এবং তাদের মুক্তির নির্দেশ দেবেন। এক পর্যায়ে জাহান্নামীরা প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী আদমের (আ) নিকট জড়ো হয়ে তাদের মুক্তির জন্য শাফাআত করার অনুরোধ জানাবে। তিনি অপারগতা প্রকাশ করবেন। তারা ছুটে যাবে নূহের (আ) কাছে। তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন। তারা ছুটে যাবে ইবরাহীমের (আ) কাছে। তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন। তারা ছুটে যাবে মূসা ইবনু ইমরানের (আ) কাছে। তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন । তারা ছুটে যাবে ঈসা ইবনু মারইয়ামের (আ) কাছে। তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন । তারা ছুটে যাবে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে। তিনি সাজদায় পড়ে আল্লাহর তাসবীহ করতে থাকবেন। আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন ততক্ষণ তিনি সাজদারত থাকবেন । আল্লাহর অনুমতিক্রমে তিনি একদল লোকের নাজাতের জন্য শাফাআত করবেন। আল্লাহ অনুগ্রহ করে তাঁর শাফাআত কবুল করবেন। আল্লাহর নির্দেশে তিনি নির্দিষ্ট ব্যক্তিদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো কিছু লোকের জন্য শাফাআত করার অনুমতি লাভের জন্য আবার সাজদায় লুটিয়ে পড়বেন। আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন ততক্ষণ তিনি সাজদায় থাকবেন । আল্লাহর অনুমতিক্রমে তিনি আরো একদল লোকের জন্য শাফাআত করবেন। আল্লাহ অনুগ্রহ করে তাঁর শাফাআত কবুল করবেন। আল্লাহর নির্দেশে তিনি সেই লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারবার সাজদারত হয়ে শাফাআতের অনুমতি চাইতে থাকবেন। আল্লাহ অনুগ্রহ করে তাঁকে একের পর এক বহু সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনার অনুমতি দেবেন । আল্লাহ সর্বশেষে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাদের অন্তরে সরিষার বীজের পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনার অনুমতি দেবেন। জাহান্নামীরা জাহান্নামে ও জান্নাতীরা জান্নাতে অবস্থান গ্রহণের পর একজন ফেরেশতা মধ্যবর্তী স্থান থেকে ঘোষণা করবেন : ওহে জাহান্নামীরা, আর মৃত্যু নেই । ওহে জান্নাতীরা, আর মৃত্যু নেই। সামনে অনন্ত জীবন।

জাহান্নাম

জাহান্নাম কঠিন শাস্তির স্থান । আল্লাহ ভয়ংকর আকৃতির ফেরেশতাদেরকে জাহান্নামীদের শাস্তির জন্য নিযুক্ত করে রেখেছেন। আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা অপরাধীদেরকে গলায় বেড়ি ও দেহে লোহার শিকল পেঁচিয়ে টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে। জাহান্নামীদেরকে আলকাতরার পোশাক পরানো হবে। আল্লাহ দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তর গুণ বেশি তেজযুক্ত আগুন দিয়ে জাহান্নাম ভরে রেখেছেন। ঘন শ্বাসরুদ্ধকর ঝাঁঝালো কষ্টদায়ক ধোঁয়া জাহান্নামে আবর্তিত হতে থাকবে। আল্লাহ জাহান্নামের বিভিন্ন অংশ বিশাল আকৃতির ভয়ংকর বিষধর সাপ দিয়ে ভর্তি করে রেখেছেন। আল্লাহ জাহান্নামীদের দেহকে বিশাল আকৃতি দেবেন। ফেরেশতারা ভারী গুর্জ দিয়ে আঘাত হেনে জাহান্নামীদের দেহ ক্ষত-বিক্ষত করতে থাকবেন । জাহান্নামীরা ভীষণ চিৎকার করতে থাকবে। আগুনের উত্তাপে ও পিপাসায় তারা হাঁপাতে থাকবে । জাহান্নামীদেরকে তাদের দেহ-নির্গত রক্ত-পুঁজ পান করতে দেয়া হবে । টগবগ করে ফুটছে এমন পানি তাদেরকে পান করতে দেয়া হবে । উত্তপ্ত তেলের গাদ তাদেরকে পান করানো হবে । জাহান্নামীদেরকে কাঁটাযুক্ত, তিক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত যাক্কুম গাছ গিলতে বাধ্য করা হবে। জাহান্নামীদের গায়ের চামড়া পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে, নতুন চামড়া জন্মাবে ও নতুনভাবে পুড়তে থাকবে । আল্লাহ জাহান্নামে আরো বহুবিধ শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন। জাহান্নামে সবচে' কম শান্তি যাকে দেয়া হবে তাকে আগুনের ফিতাযুক্ত একজোড়া জুতা পরানো হবে। এতে তার মাথার মগজ চুলার ওপর হাঁড়ির পানির মতো টগবগ করে ফুটতে থাকবে ।

জান্নাত

জান্নাত অনাবিল সুখ-শান্তির স্থান। আল্লাহ তাঁর আদেশানুবর্তী বান্দাদেরকে মেহমানের মর্যাদা দেবেন । আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা তাঁদেরকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। আল্লাহ সবচে' কম মর্যাদাবান জান্নাতীকে বর্তমান পৃথিবীর চেয়ে দশগুণ বেশি স্থান দান করবেন । আল্লাহ্ জান্নাতকে নয়নাভিরাম বাগানময় করে রেখেছেন। আল্লাহ জান্নাতের বাগানগুলোকে পাখ-পাখালিতে পূর্ণ করে রেখেছেন । আল্লাহ জান্নাতকে ফুলে ফুলে পরিপূর্ণ করে রেখেছেন। আল্লাহর নির্দেশে জান্নাতে সুপেয় পানির ঝর্ণা, সুস্বাদু দুধের ঝর্ণা, স্বচ্ছ মধুর ঝর্ণা ও অন্যান্য উন্নত মানের পানীয়র ঝর্ণা অবিরাম প্রবাহিত হচ্ছে। আল্লাহ জান্নাতে অতি সুস্বাদু মাছ, গোশত, রকমারি খাদ্য ও ফলের সমারোহ ঘটিয়েছেন । আল্লাহ জান্নাতে অনুপম উপদানে তৈরি সুউচ্চ, সুবিস্তৃত ও সুদৃশ্য প্রাসাদ সারি সজ্জিত করে রেখেছেন। আল্লাহ জান্নাতের প্রাসাদগুলোর মেঝেকে অতি উচ্চমানের পুরু কার্পেটে সজ্জিত করেছেন। আল্লাহ জান্নাতীদের জন্য অতীব সুন্দর ও অতীব আরামদায়ক পোশাক মওজুদ করে রেখেছেন। আল্লাহ জান্নাতীদের জন্য অতীব আরামদায়ক আসন ও শয্যার ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহ জান্নাতকে আলো-ঝলমল করে রেখেছেন। আল্লাহ জান্নাতকে অগণিত সৌন্দর্য-শোভার উপকরণে সজ্জিত করে রেখেছেন। আল্লাহ জান্নাতের প্রতিটি বস্তুকে তুলনাহীন সুঘ্রাণ যুক্ত করে রেখেছেন । আল্লাহ জান্নাতকে উত্তাপ ও শীতের প্রকোপ মুক্ত করে গড়েছেন। আল্লাহ জান্নাতের সব কিছু জান্নাতীদের নাগালের মধ্যেই রেখেছেন। আল্লাহ জান্নাতীদের খিদমাতের জন্য গিলমান ( চির বালকদল) মুতায়েন করে রেখেছেন । স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে জান্নাতী হলে আল্লাহ তাঁদেরকে জান্নাতেও অনন্তকালের জন্য জীবন-সাথী বানিয়ে দেবেন। আল্লাহ জান্নাতে পুরুষদেরকে হুরও দেবেন। আল্লাহ জান্নাতীদেরকে ষাট হাত দৈর্ঘ্য দান করবেন। আল্লাহ জান্নাতীদেরকে চির যুবক ও চির যুবতী বানাবেন। আল্লাহ জান্নাতীদেরকে কখনো বুড়ো হতে দেবেন না । আল্লাহ জান্নাতীদেরকে চিরকাল রোগমুক্ত রাখবেন। আল্লাহ জান্নাতীদেরকে যাবতীয় দৈহিক ও মানসিক অশান্তি মুক্ত রাখবেন । আল্লাহ জান্নাতীদেরকে অসাধারণ দৈহিক সৌন্দর্য দান করবেন। আল্লাহ জান্নাতীদেরকে অসাধারণ সুঘ্রাণযুক্ত করবেন। আল্লাহ জান্নাতে এক বিশাল মার্কেট বানিয়ে রেখেছেন যেখানে প্রতি জুমাবার জান্নাতী পুরুষেরা একত্রিত হবেন । সেখানে প্রবাহিত হাওয়ার ছোঁয়ায় তাঁদের রূপ-সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে এবং তাঁদের পোশাক থেকে নতুন সুগন্ধ বের হতে থাকবে। তাঁরা তাঁদের প্রাসাদে ফিরে তাঁদের স্ত্রীদেরকেও পূর্বের চেয়ে আরো বেশি রূপ-লাবণ্যে ভরা দেখতে পাবেন । আল্লাহ জান্নাতীদেরকে এমন ক্ষমতা দেবেন যে হাজারো মাইল দূরে অবস্থিত ব্যক্তিকে তাঁরা দেখতে চাইলে দেখতে পাবেন এবং কথা বলতে চাইলে বলতে পারবেন । আল্লাহ এমন এমন বৃক্ষ তৈরি করে রেখেছেন যার একটির শাখা-প্রশাখার নিচে একজন অশ্বারোহী একশত বছর অশ্ব চালনা করেও তার সীমানা অতিক্রম করতে পারবেন না। আল্লাহ জান্নাতীদের জন্য এমন বাহন মওজুদ করে রেখেছেন যাতে আরোহণ করে তাঁরা গোটা বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারবেন। [সম্ভবত জাহান্নামের অংশটুকু ছাড়া মহাবিশ্বের বাকি অংশকে জান্নাতে রূপান্তরিত করা হবে। আল্লাহ পৃথিবীটাকেও জান্নাতের অংশ বানিয়ে দেবেন । একজন জান্নাতী যা চাইবেন তা-ই পাবেন । আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে আরো অনেক কিছু দেবেন। আল্লাহ জান্নাতে এমন সব নিয়ামাত মওজুদ করে রেখেছেন যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, যার কথা কোন কান কখনো শুনেনি এবং যার ধারণা কোন হৃদয়ে কখনো উদিত হয়নি । আল্লাহ নতুন নতুন নিয়ামাত সৃষ্টি করে জান্নাতীদেরকে উপহার দিতে থাকবেন । আল্লাহ জান্নাতীদেরকে তাঁর দর্শন দান করে ধন্য করবেন । আল্লাহর দর্শনই হবে জান্নাতীদের নিকট সবচে' বেশি আনন্দের বিষয় । আল্লাহ মহাশিল্পী। আল্লাহ মহাবিজ্ঞানী । আল্লাহর সৃষ্টি নৈপুণ্য তুলনাহীন। আল্লাহর কোন খুঁত নেই । আল্লাহর কোন ত্রুটি নেই । আল্লাহর কোন অপূর্ণত্ব নেই ৷

পরিশেষে

আল্লাহর কোন অপারগতা নেই ৷ পৃথিবীর সবগুলো গাছ দিয়ে যদি কলম বানানো হয়, সমুদ্রগুলোর পানির সাথে আরো সাত সমুদ্রের পানি মিলিয়ে যদি কালি বানানো হয়, তবুও আল্লাহর কথা লিখে শেষ করা যাবে না । আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ । আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা । আল্লাহর জন্যই সব সম্মান।

Next Post Previous Post
1 Comments
  • নামহীন
    নামহীন ৫ ডিসেম্বর, ২০২২ এ ৩:২১ PM

    very very nice

Add Comment
comment url