হিজাব বা পর্দা করার গুরুত্ব

হিজাব বা পর্দা করার গুরুত্ব

হিজাব বা পর্দা আল্লাহ তায়ালার এমন একটি উত্তম বিধান যা অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার পথ রুদ্ধ করে সমাজকে কলুষমুক্ত রাখে, যিনা ও ব্যভিচারের পথ বন্ধ করে দেয় । পোশাকের পাশাপাশি চোখ, মন, চিন্তা-চেতনা ও হৃদয় পবিত্র রাখার মাধ্যমে হিজাব বা পর্দার বিধান মানতে হবে।

 হিজাব বা পর্দা করার গুরুত্ব

হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব

ব্যভিচার বা যিনাকে শুধুমাত্র যৌনাঙ্গের সাথে সম্পর্কিত না করে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথেও সম্পর্কিত করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেন- 'আদম সন্তানের জন্য ব্যভিচারের একটি অংশ নির্দিষ্ট করা আছে। এটা সে নিঃসন্দেহে পাবেই। দুই চোখের যিনা হলো পর নারীর প্রতি নজর করা, দুই কানের যিনা হলো যৌন উত্তেজক কথাবার্তা শ্রবণ করা, মুখের যিনা হলো আলোচনা করা, হাতের যিনা স্পর্শ করা, পায়ের যিনা ঐ উদ্দেশ্যে যাতায়াত করা। অন্তর ঐ কাজের প্রতি কুপ্রবৃত্তিকে জাগ্রত করে এবং তার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে। আর যৌনাঙ্গ তা সত্য বা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে।' (মুসলিম ৪৮০২, মুসনাদে আহমাদ : ৮৫৭৬)

দেবর-ভাবীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে পর্দার গুরুত্ব

দেবর-ভাবীর পর্দা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- 'পর নারীর সাথে মেলামেশা করা থেকে বিরত থাক। আনসারীদের মধ্য থেকে একজন বললো দেবরের সাথে মেলামেশার ব্যাপারে আপনার মত কী? তিনি বললেন, দেবর মৃত্যুর মতো ভয়ংকর।' (বুখারী : ৪৮৩১) পর্দাহীন নারীদেরকে শয়তান পরপুরুষের কাছে সুসজ্জিত বা আকর্ষণীয় করে দেখায় উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেন- ‘মহিলারা পর্দায় থাকবে। তারা যখন (পর্দা উপেক্ষা করে) বাইরে আসে, তখন শয়তান তাদেরকে (অন্য পুরুষের চোখে) সুসজ্জিত করে দেখায় ৷ (তিরমিযি : ১০৯৩, তবারানি : ৯৩৬৮)

গৃহে প্রবেশের ক্ষেত্রে পর্দার গুরুত্ব

নিজগৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে প্রবেশের ক্ষেত্রে করণীয় কি হবে সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- “হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারো গৃহে অনুমতি না নিয়ে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না । এটিই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।' (নূর, ২৪ : 29) নিজ বা আত্মীয়-স্বজনের গৃহে প্রবেশের সময়ও পর্দা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তবে যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম দিবে, অভিবাদনস্বরূপ যা আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নির্দেশ বিশদভাবে বিবৃত করেন, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।' (নূর, ২৪ : ৬১) তেমনি মালিকানাধীন দাস-দাসী কিংবা নাবালক সন্তান তাদের মালিক বা পিতা-মাতার গৃহে প্রবেশের ক্ষেত্রেও ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- 'হে মুমিনগণ! তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীগণ এবং তোমাদের মধ্যে যারা বয়ঃপ্রাপ্ত হয় নাই তারা যেন তোমাদের কক্ষে প্রবেশ করতে তিন সময়ে অনুমতি গ্রহণ করে, ফজরের সালাতের পূর্বে, দ্বিপ্রহরে যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলে রাখ তখন এবং ইশার সালাতের পর; এই তিন সময় তোমাদের গোপনীয়তার সময়। এই তিন সময় ব্যতীত অন্য সময়ে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে তোমাদের জন্য এবং তাদের জন্য কোনো দোষ নাই। তোমাদের একে অপরের নিকট তো যাতায়াত করতেই হয় । এইভাবে আল্লাহ তোমাদের নিকট তাঁর নির্দেশ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময় । আর তোমাদের সন্তান-সন্ততি বয়ঃপ্রাপ্ত হলে তারাও যেন অনুমতি প্রার্থনা করে যেমন অনুমতি প্রার্থনা করে থাকে তাদের বয়োজ্যেষ্ঠগণ। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নির্দেশ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন, আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।' (নূর, ২৪ : ৫৮-৫৯)

বৃদ্ধা নারীর ক্ষেত্রে পর্দার গুরুত্ব

বৃদ্ধা নারী তার আভরণ বা সৌন্দর্য কতটুকু প্রদর্শন করতে পারবে কিংবা তার পর্দার বিধান কি? এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, তাদের জন্য অপরাধ নাই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের বহির্বাস খুলে রাখে; তবে তা হতে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।' (নূর, 28 : 60 ) প্রাপ্তবয়স্কা মেয়েদের পর্দা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেন- ‘মেয়েরা যখন প্রাপ্তবয়স্কা হয়, তখন তাদের শরীরের কোনো অঙ্গ দেখা যাওয়া বৈধ নয়! তবে এই এই অঙ্গের কথা আলাদা। একথা বলে তিনি স্বীয় মুখমণ্ডল এবং হস্তদ্বয়ের প্রতি ইংগিত করেন।' (আবু দাউদ : ৩৫৮০ )

বিয়ে করার উদ্দেশ্যে পর্দার গুরুত্ব

বিয়ে করার উদ্দেশ্যে পাত্র-পাত্রী একে অপরকে দেখতে পারবে কি না এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, অতঃপর তার পক্ষে ওই নারীর যতটুকু সৌন্দর্য দেখা সম্ভব হয়, যা তাকে মুগ্ধ করে এবং মেয়েটিকে (বিয়ে করতে) উদ্বুদ্ধ করে, সে যেন তা দেখে নেয়।' (আবু দাউদ : ১৭৮৩, মুসনাদে আহমাদ : ১৪০৫৯ ) এ ছাড়াও এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ এর কাছে নিজের বিয়ের সংবাদ দিলে তিনি তাকে বললেন- ‘তুমি কি তাকে দেখেছ?' সে বললো, ‘না’। তিনি বললেন, 'যাও, তুমি গিয়ে তাকে দেখে নাও।' (মুসলিম : ২৫৫২, বায়হাকী : ৪২৮৮) নিজ স্বামীর কাছে অন্য নারীর দৈহিক সৌন্দর্য বা গঠনের বর্ণনা পর্দার লংঘন হতে পারে । রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেন- 'কোনো নারী যেন অন্য কোনো নারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার বর্ণনা নিজ স্বামীর নিকট এমনভাবে না দেয়, যেন সে (স্বামী) তাকে (বর্ণিত নারী) দেখতে পাচ্ছে।' (বুখারী : ৪৮৩৯, মুসনাদে আহমাদ : ৪১৬৩) পর্দা হচ্ছে নিজ গোপনীয়তা রক্ষা। যে তার অনুসরণ করবে না আল্লাহ তায়ালাও তার গোপনীয়তা রক্ষা করবেন না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেন- ‘যে মহিলা স্বামী গৃহ ছাড়া অন্যত্র তার বস্ত্র খুলে রাখলো, সে তো তার ও আল্লাহর মাঝের পর্দা ছিঁড়ে ফেললো।' (ইবনে মাজাহ : ৩৭৪০, তিরমিযী : 2727)

কলুষমুক্ত সমাজ গঠন

কলুষমুক্ত সমাজ গঠন করার উদ্দেশ্যে ইসলাম ব্যভিচারকে নিষিদ্ধ করাসহ তার যাবতীয় উপায়-উপকরণ এবং উপলক্ষকেও হারাম করে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার পথে বিভেদ রেখা টেনে দিয়েছে। নারীদেরকে যেমনি গায়রে মুহরিম পুরুষ থেকে নিজ রূপ-লাবণ্য, দৈহিক সৌন্দর্য ও কমনীয়তাকে গোপন করতে বলা হয়েছে তেমনি পুরুষদেরকে তার দৃষ্টি অবনমিত রাখা এবং যৌনাঙ্গের হিফাযত করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- 'যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী জিনিসের (জিহ্বা) এবং দুপায়ের মধ্যবর্তী জিনিসের (লজ্জাস্থান) হিফাজতের নিশ্চয়তা দিবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দিবো।' (বুখারী : ৫৯৯৩) পর্দার বিধান পুরুষ ও নারী উভয়েরই জন্য অপরিহার্য এবং তা উভয়েরই অন্তরের পবিত্রতাস্বরূপ উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা তার পত্নীদের নিকট হতে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল হতে চাইবে। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র।' (আহযাব, ৩৩ : ৫৩ )

উপসংহার

হিজাব বা পর্দা আল্লাহ তায়ালার এমন একটি উত্তম বিধান যা অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার পথ রুদ্ধ করে সমাজকে কলুষমুক্ত রাখে, যিনা ও ব্যভিচারের পথ বন্ধ করে দেয় এবং মানবিক মর্যাদার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করে। আর যদি সমাজে পর্দার অনুশীলন না থাকে তাহলে সমাজে ব্যভিচার, অনাচার ও যিনার পথ উন্মুক্ত থাকে । আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল এর নির্দেশমত যার পর্দার বিধান মেনে চলার মাধ্যমে সমাজকে কলুষমুক্ত রাখা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url