বিশুদ্ধ আকিদা ও রিসালাত

বিশুদ্ধ আকিদা ও রিসালাত

বিশুদ্ধ আকিদা হল ইসলামের মূল ধারণা বা বিশ্বাস। ইসলামে বিশুদ্ধ আকিদা হল, একমাত্র আল্লাহ তাআলার উপর বিশ্বাস এবং মুসলিমদের দায়িত্ব হল আল্লাহ তাআলার ইচ্ছামত জীবন কাটানো এবং আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিতে অনুসরণ করা। রিসালাত হল ইসলামের মূল উদ্দেশ্য এবং এর সম্পূর্ণ প্রণালী বা সিস্টেম। রিসালাত মুসলিমদের জীবনে একটি গাইডলাইন হিসাবে কাজ করে এবং এর সূচনা মুসলিমদের উদ্দেশ্য হল আল্লাহ তাআলার ইচ্ছামত জীবন কাটানো এবং দিন শেষে জান্নাতে প্রবেশ করা। রিসালাতের মাধ্যমে মুসলিমদের জীবনে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছামত অনুসরণ করতে হয় এবং রিসালাত মুসলিমদের মধ্যে একতা, শান্তি এবং প্রেম নির্বাহ করার জন্য একটি সামাজিক প্রণালী স্থাপন করে।

বিশুদ্ধ আকিদা ও রিসালাত

আকিদার বিশুদ্ধতা

আকিদা শব্দটি আরবী এর আভিধানিক অর্থ বিশ্বাস। পরিভাষায়: ইসলামের বিষয়গুলোর প্রতি সঠিক ও দৃঢ় বিশ্বাসকেই আকিদা বলে । ইসলাম আল্লাহ তায়ালার মনোনীত একমাত্র দীন বা জীবনব্যবস্থা। এর দুটি দিক রয়েছে, যথা বিশ্বাসগত দিক ও আচরণগত বা প্রায়োগিক দিক। আর বিশ্বাসগত দিকের নামই হচ্ছে আকিদা। আল্লাহ তায়ালা, নবী-রাসূল, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম ও তাকদীরের উপর বিশ্বাসসহ যাবতীয় বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ও মেনে নেওয়াই হচ্ছে আকিদা । আকিদার এই ৭টি মৌলিক বিষয় একত্রে একটি বাক্যে বর্ণিত হয়েছে-‘আমি ঈমান আনলাম আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি, আখেরাতের প্রতি, তাকদিরের প্রতি যার ভালো-মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয় এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি ।' এ বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা কুরআন ও হাদীসের ভাষ্য দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত। মুসলিম হতে হলে সবাইকে এ বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়। আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, আসমানী কিতাবসমূহ ও নবীগণের উপর বিশ্বাস স্থাপন সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন- ‘রাসূল, (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার প্রতি তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ঈমান এনেছে এবং মুমিনগণও। তাদের সকলে আল্লাহে, তাঁর ফেরেশতাগণে, তাঁর কিতাবসমূহে এবং তাঁর রাসূলগণে ঈমান এনেছে।' (বাকারা, ২ : ২৮৫) মুমিন ব্যক্তি কোনো বিপদে পতিত হলে আল্লাহ তায়ালা তাকে তাকদীরে বিশ্বাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন- ‘বলো, আমাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তা ছাড়া আমাদের অন্য কিছু হবে না। তিনি আমাদের কর্মবিধায়ক আর আল্লাহর উপরই মুমিনদের নির্ভর করা উচিত।' (তওবা, ৯ : ৫১) মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন- ‘কাফিররা ধারণা করে যে, তারা কখনোই পুনরুত্থিত হবে না। বলো নিশ্চয়ই হবে, আমার প্রতিপালকের শপথ! তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমরা যা করতে তোমাদেরকে সে সম্পর্কে অবশ্যই অবহিত করা হবে। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।' (তাগাবুন ৬৪ : ৭) জিবরাইল - সাধারণ মানুষের আকৃতিতে এসে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে উপবিষ্ট সাহাবীদেরকে শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইসলাম, ঈমান ও ইহসান সম্পর্কে জানতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেছিলেন- ‘ঈমান হলো তুমি বিশ্বাস স্থাপন করবে আল্লাহর উপর, আখেরাতের উপর, ফেরেশতাগণের উপর, আসমানী কিতাবসমূহের উপর, নবীগণের উপর। বিশ্বাস স্থাপন করবে মৃত্যুর উপর এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের উপর। বিশ্বাস স্থাপন করবে বেহেশতের উপর, দোযখের উপর, হিসাব-নিকাশের উপর, মিযান বা পরিমাপের যন্ত্রের উপর। বিশ্বাস স্থাপন করবে তাকদীরের ভালো ও মন্দের উপর।' (মুসনাদে আহমাদ : ২৭৭৫) আল্লাহ তায়ালা, নবী-রাসূল, ফেরেশতা, আসমানী কিতাব, পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম ও তাকদীরের উপর সঠিক বিশ্বাস রাখার মাধ্যমে সালাত, সাওম, হজ ও যাকাত পালনসহ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পথে নিজেদেরকে পরিচালিত করলে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভ সম্ভব হবে।

রিসালাতের বিশুদ্ধতা

রিসালাত শব্দটি আরবী এর আভিধানিক অর্থ বার্তা, সংবাদ, খবর, পয়গাম, চিঠি ইত্যাদি। বার্তা বা খবর পৌঁছানোকে রিসালাত বলে। ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার বাণী, আদেশ-নিষেধ মানুষের নিকট পৌছানোকে রিসালাত বলে। যাঁরা এ সংবাদ পৌঁছানোর কাজ করেন তাঁরা হলেন রাসূল। রিসালাত বা নবী-রাসূলগণের ওপর বিশ্বাস করা ফরয বা আবশ্যক। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রথম মানব হযরত আদম কে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠানোর সময় তাঁর সাথে গাইডলাইন বা জীবন বিধান ও দিয়ে দিয়েছেন। যাকে বলা হয় আসমানী কিতাব। মানুষ পৃথিবীতে কিভাবে চললে আল্লাহ তায়ালা খুশি হবেন, কিভাবে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে এবং মৃত্যুর পরে জান্নাত লাভ করবে তার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয় আসমানী কিতাবে। আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে বলেন- ‘তিনিই তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, অপর সমস্ত দীনের উপর তাকে জয়যুক্ত করার জন্য। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।' (ফাতহ, ৪৮ : ২৮) আল্লাহ তায়ালা জীবন বিধান পাঠালেও মানুষ কালক্রমে তা ভুলে যায়। ফলে তিনি ক্রমাগত আসমানী কিতাবসহ রাসূল প্রেরণ করেন। এভাবে মহান আল্লাহ বহু নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন মানুষকে তার চলার সঠিক নিয়ম মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে— ‘আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি।' (নাহল, ১৬ : ৩৬) পৃথিবীতে এমন কোনো জাতি ছিল না যেখানে আল্লাহ তায়ালা কোনো নবী রাসূল প্রেরণ করেননি। রিসালাতের কাজ শুরু করেছেন আদি মানব হযরত আদম এবং এই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে সর্বশেষ নবী ও রাসূল মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মাধ্যমে। মাঝে রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন হযরত নূহ, ইবরাহীম, দাউদ, ইসমাইল সহ অগণিত নবী ও রাসূল। নবী রাসূলগণ আল্লাহ তায়ালার দেওয়া এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। যারা তাদের আনুগত্য ও অনুসরণ করেছে তারা সফলকাম হয়েছে। আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আনীত বিধান অনুসরণ করব তাহলে আমরাও সফলকাম হব। কেননা আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলেছেন- ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য তো রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।' (আহযাব, ৩৩ : ২১) আল্লাহ তায়ালা নবী ও রাসূলগণকে স্বীয় জাতির কাছে শিক্ষকরূপে প্রেরণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর উম্মতকে শিক্ষাদানের জন্যই প্রেরিত হয়েছেন উল্লেখ করে বলেন- ‘নিশ্চয়ই আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।' (ইবনে মাজাহ : ২২৫, সুনানে দারেমী : ৩৫৭)

পরিশেষে

আল্লাহ তায়ালা, নবী-রাসূল, ফেরেশতা, আসমানী কিতাব, পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম ও তাকদীরের উপর সঠিক বিশ্বাস রাখার মাধ্যমে সালাত, সাওম, হজ ও যাকাত পালনসহ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পথে নিজেদেরকে পরিচালিত করলে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভ সম্ভব হবে। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে তাঁর বান্দাদের হিদায়াতের জন্য রাসূলগণকে রিসালাতের মহান দায়িত্ব দিয়ে এ দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url