কিয়ামতের ভয়াবহতা ও বিচার ব্যবস্থা

কিয়ামতের ভয়াবহতা

কিয়ামত হল মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী দুনিয়ার শেষ দিন যখন আল্লাহ তাআলা পৃথিবীকে ধ্বংস করবেন এবং সমস্ত মানবজাতিকে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে ফেরত দিবেন। কিয়ামতের ঘটনাটি বেশ ভয়াবহ হবে কারণ এটি সমস্ত মানবজাতিকে আল্লাহর কাছে অবস্থান নিশ্চিত করবে এবং সমস্ত মানুষকে তাদের কাজের সাথে সম্পর্কিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়াও, কিয়ামতে সমস্ত মানবজাতি আল্লাহর নিকট সমান হবে এবং তাদের কর্ম অনুযায়ী বিচার করা হবে। এই দিনে মানবজাতির সমস্ত জীবনধারী জীবজন্তু আল্লাহর সামনে হাজির হবে এবং তাদের অবস্থান হবে একটি বিশাল মাঠে। সেখানে আল্লাহ সব মানুষকে বিচার করবেন, তিনি সমস্ত মানুষকে তাদের কর্মের উপর বিচার করবেন।

কিয়ামতের ভয়াবহতা ও বিচার ব্যবস্থা

কিয়ামত দিনের বিচার

কিয়ামত শব্দটি আরবী এর অর্থ মহাপ্রলয়। আল্লাহ তায়ালা এ গোটা বিশ্ব মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। একদিন আল্লাহ তায়ালা এ পৃথিবী ধ্বংস করে দিবেন। তাঁর নির্দেশে হযরত ইসরাফিল শিঙ্গায় ফুঁক দিবেন। ফলে চন্দ্র-সূর্য ও তারকারাজি খসে পড়বে, পাহাড় পর্বত তুলার ন্যায় উড়তে থাকবে, ভূগর্ভস্থ সব কিছু বের হয়ে যাবে, সকল প্রাণী মৃত্যুবরণ করবে এবং গোটা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এ সময় আল্লাহ তায়ালা থাকবেন আর কেউ বিদ্যমান থাকবে না। পৃথিবী ধ্বংসের এ মহাপ্রলয়ের নাম কিয়ামত। মহাপ্রলয়ের পর হাশরের ময়দানে পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষকে বিচারের সম্মুখীন করা হবে। আল্লাহ তায়ালার বান্দাগণের পার্থিব জীবনের পাপ- পুণ্যের হিসাব নিকাশ করে তার সঠিক বিচার করা হবে। কিয়ামতের চিত্র ও বিচার সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য নির্দেশনা রয়েছে । আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন- ‘কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুষ্টিতে এবং আকাশমণ্ডলী থাকবে ভাঁজ করা অবস্থায় তাঁর দক্ষিণ হস্তে। পবিত্র ও মহান তিনি, তারা যাকে শরিক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে। শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে, ফলে যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকলে মূর্ছিত হয়ে পড়বে। অতঃপর আবার শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা দণ্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকবে। বিশ্ব তার প্রতিপালকের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হবে, আমলনামা পেশ করা হবে এবং নবীগণ ও সাক্ষীগণকে উপস্থিত করা হবে এবং সকলের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে ও তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না। প্রত্যেকের কৃতকর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেওয়া হবে। এরা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। (যুমার, ৩৯ : ৬৮-৭০ )

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কথা বলার শক্তি

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার গুনাহের বিচারের জন্য বান্দার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কথা বলার শক্তি দিবেন, যার ফলে বান্দা যে অঙ্গ দিয়ে যে গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়েছিল সে অঙ্গ সে গুনাহের সাক্ষ্য প্রদান করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যে দিন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত ও তাদের চরণ তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে, সে দিন আল্লাহ তাদের প্রাপ্য প্রতিফল পুরোপুরি দিবেন এবং তারা জানবে, আল্লাহই সত্য, স্পষ্ট প্রকাশক।' (নূর, ২৪ : ২৪-২৫) কিয়ামতের বিচার ফায়সালার দিনে সবকিছুরই পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে হিসাব গ্রহণ করা হবে। হিসাবগ্রহণ ছাড়া কাউকে একবিন্দু নড়তে দেওয়া হবে না। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘কিয়ামতের দিন মানুষের পা একবিন্দু নড়তে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার নিকট এই পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা না হবে, ১. নিজের জীবনকাল সে কোন কাজে অতিবাহিত করেছে? ২. যৌবনের শক্তিসামর্থ্য কোথায় ব্যয় করেছে? ৩. ধন-সম্পদ কোথা হতে উপার্জন করেছে? ৪. কোথায় তা ব্যয় করেছে? এবং ৫. সে (দীনের) যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে?' (তিরমিযি : ২৩৪০ )

ন্যায়বিচারের মানদণ্ড

িয়ামতের বিচার ফায়সালায় কারো প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না। সবারই তিল পরিমাণ খারাপ ভালো, পাপ-পুণ্য সকল কাজেরই বিচার করা হবে। আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন স্বয়ং ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করবেন এবং নিজেই হিসাব গ্রহণ করবেন উল্লেখ করে বলেন- ‘এবং কিয়ামতের দিন আমি স্থাপন করবো ন্যায়বিচারের মানদণ্ড। সুতরাং করো প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না এবং কর্ম যদি তিল পরিমাণ ওজনেরও হয় তবু তা আমি উপস্থিত করবো; হিসাবগ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট।' (আম্বিয়া, ২১ : ৪৭)

সুপারিশ গ্রহণ

কিয়ামতের বিচারে প্রিয় মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান কেউই কারো কোনো কাজে আসবে না। আল্লাহ তায়ালার অনুমতি ছাড়া কারো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না । কারো সাহায্য গ্রহণ করা হবে না। সে দিন তারা একে- অন্যের নিকট থেকে পালিয়ে বেড়াবে। সবাই তাদের নিজ নিজ কর্মের হিসাব নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকবে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন— ‘তোমরা সে দিনকে ভয় কর যেদিন কেউ কারোও কোনো কাজে আসবে না, কারোও সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না, কারোও নিকট হতে বিনিময় গৃহীত হবে না এবং তারা কোনো প্রকার সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।' (বাকারা, 2 : ৪৮) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন- ‘যখন। কিয়ামত উপস্থিত হবে, সে দিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাই ২.৩, তার মাতা, তার পিতা, তার স্ত্রী ও তার সন্তান হতে। সে দিন তাদের প্রত্যেকের হবে এমন গুরুতর অবস্থা যা তাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে।' (আবাসা, ৮০ : ৩৩-৩৭)

আরশের ছায়া

কিয়ামতের বিচারের ভয়াবহ দিবসে সূর্যের তেজস্ক্রিয়তা বেড়ে যাবে। আর এ অবস্থায় আল্লাহ তায়ালার আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। আর কেবলমাত্র সাত প্রকার লোক সেই আরশের ছায়ায় স্থান পাবে । বিচারে তারাই আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে । রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- সাত প্রকার লোককে আল্লাহ নিজের আরশের ছায়ায় আশ্রয় দিবেন, যে দিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক । ২. যে যুবক তার প্রভুর ইবাদত করতে করতে বড় হয়েছে। ৩. যে ব্যক্তির মন মসজিদের সাথে বাঁধা। ৪. যে দুটি লোক আল্লাহরই উদ্দেশে এক অপরকে ভালোবাসে-তারা আল্লাহর উদ্দেশে মিলিত হয়, আবার আল্লাহর উদ্দেশেই বিচ্ছিন্ন হয়। ৫. যে ব্যক্তি মর্যাদাসম্পন্না রূপসী নারীর অবৈধ আহ্বানকে ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি' বলে প্রত্যাখ্যান করে। ৬. যে ব্যক্তি এমন গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কী দান করল বাম হাতও তা জানতে পারে না। ৭. যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রুধারা বইতে থাকে। (বুখারী : ৬২০, মুসলিম : ১৭১২)

আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত

দুনিয়ার জীবনে শুধুমাত্র নেক আমল করার মাধ্যমেই কিয়ামতের বিচারে পার পাওয়া যাবে না। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির মাধ্যমেই কেবল পরকালীন মুক্তি বা বিচার থেকে মুক্তিলাভ করা সম্ভব হবে। রাসূলুল্লাহ বলেন- ‘কোনো ব্যক্তির নেক আমল কখনও তাকে জান্নাতে নিতে পারবে না। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনাকেও না? তিনি বললেন, না, আমাকেও না, যতক্ষণ না আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত আমাকে ঘিরে ফেলে। অতএব তোমরা মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করো। তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কেননা সে ভালো লোক হলে আশা করা যায় বেশি বেশি নেক আমল করার সুযোগ পাবে এবং পাপী হলে অনুশোচনা করার সুযোগ লাভ করবে।' (বুখারী : ৫২৪১)

আমলনামা প্রদান

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাঁর যে সকল বান্দার উপর সন্তুষ্ট থাকবেন সে সকল প্রিয় বান্দাকে বিনা হিসেবেই জান্নাত দান করবেন। আর হিসাব গ্রহণের জন্য যারই আমলনামা যাচাই করা হবে তার জন্য হিসাব সহজতর হবে না এবং তার জন্য আযাব অবধারিত থাকবে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার দরবারে দাঁড়িয়ে কোনো হিসাব কেউ দিতে পারবে না। হাদীসে এসেছে- একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন যে ব্যক্তির হিসাব যাচাই করা হবে, তার ধ্বংস অনিবার্য।' আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) বলেন আমি প্রশ্ন করলাম, আল্লাহ তায়ালা কি এ কথা বলেননি যে, ‘অতঃপর যার আমলনামা ডান হাতে প্রদান করা হবে তার হিসাব হবে সহজতর।' রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার উত্তরে বললেন ‘সেটা তো হিসাবের নামে দৃশ্যত পেশ করা মাত্র। কিয়ামতের দিন যে ব্যক্তির হিসাব যাচাই করা হবে, আযাব তার জন্য অবধারিত।' (বুখারী : ৬০৫৬) কিয়ামতের বিচারের দিন বিচার ফায়সালার মাধ্যমে সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কারস্বরূপ জান্নাতে এবং গাফিল গুনাহগারদেরকে তিরস্কারস্বরূপ জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যে কেউ সৎকর্ম নিয়ে আসবে, সে তা হতে উৎকৃষ্ট প্রতিফল পাবে এবং সে দিন তারা শঙ্কা হতে নিরাপদ থাকবে। যে কেউ অসৎকর্ম নিয়ে আসবে, তাকে আধোমুখে নিক্ষেপ করা হবে দোযখে এবং তাদেরকে বলা হবে তোমরা যা করতে তারই প্রতিফল তোমাদেরকে দেওয়া হচ্ছে।' (নামল, ২৭ : ৮৯-৯০)

যুলুম-অবিচার

দুনিয়াতে এক মানব সন্তান অন্য মানব সন্তানের উপর যুলুম-অবিচার করে থাকে। কিয়ামতের বিচারের দিন সে জুলুমের বিচারও করা হবে। সে দিন যুলুম বা অত্যাচারের কোনো ক্ষমা হবে না, বিনিময়ে অত্যাচারিত ব্যক্তি অত্যাচারী ব্যক্তির পুণ্যকাজগুলো পেয়ে যাবে নতুবা অত্যাচারিত ব্যক্তির পাপগুলো অত্যাচারীকে দিয়ে দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে রাসূল বলেন- ‘যে ব্যক্তি তার কোনো ভাইয়ের প্রতি যুলুম করেছে তার সম্মান বা অন্য কোনো বিষয়ে, সে যেন আজই তার নিকট থেকে মাফ করিয়ে নেয়, সেই দিন আসার পূর্বে, যে দিন তার নিকটে দিরহাম বা দিনার কিছুই থাকবে না । সে দিন যদি তার কোনো নেক আমল থাকে, তবে তার যুলুম পরিমাণ নেকী সেখান থেকে নিয়ে নেওয়া হবে । আর যদি তার কাছে নেকী না থাকে, তবে মযলুম ব্যক্তির পাপসমূহ তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।' (বুখারী : ২২৬৯) কিয়ামতের দিন বিচারকার্য সম্পাদনের শেষে আল্লাহ তায়ালার বান্দাদেরকে গাফিলকারী শয়তান মানব সন্তানদের উদ্দেশে তার কৃতকর্মের ফলাফল ও তার অক্ষমতা উল্লেখপূর্বক একটি ভাষণ প্রদান করবে।

শয়তানের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যখন বিচারকার্য সম্পন্ন হবে তখন শয়তান বলবে, আল্লাহ তো তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সত্য প্রতিশ্রুতি, আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। আমার তো তোমাদের উপর কোনো আধিপত্য ছিল না, আমি কেবল তোমাদেরকে আহ্বান করেছিলাম এবং তোমরা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলে। সুতরাং তোমরা আমার প্রতি দোষারোপ করো না, তোমরা নিজেদেরই প্রতি দোষারোপ কর। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নই এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নও । তোমরা যে পূর্বে আমাকে আল্লাহর শরিক করেছিলে আমি তা অস্বীকার করছি, যালিমদের জন্য তো মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।' (ইবরাহীম, ১৪ : ২২) যে কিয়ামতের বিচারের দিন সর্বপ্রথম বিচার করা হবে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করার বিচার। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- “কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হত্যার বিচার করা হবে।' (বুখারী : ৬০৫২ ) আমাদেরকে কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান আনার পাশাপাশি সে দিনের ভয় করতে হবে। কেননা সে দিন কারো কোনো কিছুই গোপন থাকবে না । আল্লাহ তায়ালা বলেন- 'তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে, মহাদিবসে? যে দিন দাঁড়াবে সমস্ত মানুষ জগৎসমূহের প্রতিপালকের সম্মুখে।' (মুতাফফেফিন, ৮৩ : ৪-৬ )

বিচারের দিনের চিত্র

কিয়ামতের বিচারের দিনের চিত্র কত যে ভয়াবহ হবে তা ফুটে ওঠে উম্মাহাতুল মুমিনীন আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীসে- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন 'নগ্নপদ, নগ্নদেহ এবং খতনাবিহীন অবস্থায় মানুষকে জমায়েত করা হবে। আয়েশা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নারী-পুরুষ কি একে অপরের দিকে তাকাবে? নবী করিম উত্তরে বললেন সময়টা এতই কঠিন হবে যে, মনে এ ধরনের কল্পনা আসার আদৌ কোনো অবকাশই থাকবে না।' (বুখারী : ৬০৪৬, নাসাঈ : ২০৫৭) আর কিয়ামত তথা আমাদের প্রতিপালক ও মহান প্রভু আল্লাহ তায়ালার দরবারে উপস্থিত হওয়ার ভয় থাকলে আমাদের দ্বারা প্রবৃত্তির দাসত্ব করা হবে না, তাহলেই কেবল আমরা আমাদের আবাসস্থল হিসেবে পাবো জান্নাত । আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘পক্ষান্তরে যে স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি হতে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার আবাস।' (নাযিয়াত, ৭৯ : ৪০-৪১ )

সার সংক্ষেপ

আল্লাহ তায়ালার দরবারে নিজের আমল নিয়ে দাঁড়ানোর ভয় মনে পোষণের জন্য কিয়ামতের বিচারের দিনের চিত্র সর্বদা মনে লালন করতে হবে। কিয়ামতের দৃশ্য সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পবিত্র কুরআনের সূরা তাকভীর, ইনফিতার ও ইনশিকাকে । রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘কোনো ব্যক্তি যদি কিয়ামতের দৃশ্য দেখতে চায় সে যেন সূরা তাকভীর, সূরা ইনফিতার ও সূরা ইনশিকাক পাঠ করে।' (তিরমিযি : ৩২৫৬, মুসনাদে আহমাদ : ৪৫৭৫)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url