আল হাদীসে বর্ণিত ফজিলতপূর্ণ দোয়া

ফজিলতপূর্ণ কিছু দোয়া

আল হাদীসে বর্ণিত কতিপয় দোয়াঃ- রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হলেন উম্মাতের আদর্শ। তিনি নিজে আল্লাহ তায়ালার দরবারে সব সময় দোয়া করতেন। তিনি উম্মাতকে শিক্ষা দিয়েছেন কখন, কিভাবে দোয়া করবে এমনকি দোয়ার ভাষা কি হবে তাও শিক্ষা দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- 'যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে চায় না বা দোয়া করে না আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত হন।' (তিরমিযি : ৩২৯৫) ‘আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম মর্যাদাশীল কাজ দোয়া ছাড়া আর কিছুই নেই।' (তিরমিযি : ৩২৯৯)

আল হাদীসে বর্ণিত ফজিলতপূর্ণ দোয়া

বিশেষ সময় দোয়া ও প্রার্থনা

দোয়া আল্লাহ সব সময় কবুল করেন। তবে বিশেষ সময় কিছু দোয়া কবুল হওয়ার ঘোষণা হাদীসে পাওয়া যায়। যেমন: ‘প্রত্যেক রাতে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে এসে বান্দাকে এ বলে ডাকতে থাকেন; কে আমাকে ডাকবে তার ডাকে আমি সাড়া দিব, আর কে আছে আমার কাছে চাইবে তাকে আমি দিব এবং কে আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে তাকে আমি ক্ষমা করে দিব।' (মুসলিম : ১২৬১, তিরমিযি : 3420) আযান ও ইকামতের মাঝে দোয়া কবুলের কথা বর্ণিত আছে- ‘আযান ও ইকামাতের মাঝের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।' (আবু দাউদ : 809 ) এ ছাড়াও তিনি কারো জন্য দোয়া করলে অনুপস্থিতে করলে কবুল হওয়ার কথা বলেন ও দোয়া এর ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন অর্থাৎ দোয়া সংক্ষিপ্ত আকারে করা। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বর্ণিত কতিপয় দোয়া নিম্নে দেওয়া হলো-

১. ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর দোয়াঃ- ‘সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমার মৃত্যুর পর আমাকে জীবিত করলেন আর তাঁরই নিকট সকলের পুনরুত্থান হবে।' (বুখারী : ৫৮৩৭, মুসলিম : ৪৮৮৬)

২. নতুন কাপড় পরিধানকারীর জন্য দোয়াঃ- ‘নতুন পোশাক পরিধান করো, প্রশংসিতরূপে জীবনযাপন করো এবং শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করো।' (ইবনে মাজাহ : ৩৫৪৮, মুসনাদে আহমাদ : ৫৩৬৩) ৩. মসজিদে প্রবেশকালে দোয়াঃ- ‘হে আল্লাহ তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দ্বার খুলে দাও।' (মুসলিম : ১১৬৫, আবু দাউদ : ৩৯৩) ৪. মসজিদ হতে বের হওয়ার দোয়াঃ- ‘হে আল্লাহ আমি তোমার অনুগ্রহ কামনা করছি।' (মুসলিম : ১১৬৫, ইবনে মাজাহ : 763 ) ৫. সালাতে পঠিত গুরুত্বপূর্ণ দোয়াঃ- তাকবীরে তাহরীমার পর পঠিত দোয়া- 'হে আল্লাহ! তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি আর সকল প্রশংসা তোমার জন্যই। তোমার নাম মহিমান্বিত, তোমার সত্তা অতি উচ্চে প্রতিষ্ঠিত আর তুমি ছাড়া ইবাদাতের উপযুক্ত কোনো উপাস্য নেই।' (মুসলিম : ৬০৬, নাসাই । ৮৮) 'আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।' (আবু দাউদ : ৭৫২, তিরমিখি : 282 ) রুকু হতে সোজা হয়ে পড়ার দোয়া- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! সকল প্রশংসা আপনার জন্য।' (বুখারী : 908) ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্য সকল পবিত্র ও বরকতপূর্ণ প্রশংসা।' (বুখারী : ৭৫৭, আবু দাউদ : ৬৫৪ ) সাজদার তাসবীহ- ‘আমার মহান সুউচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।' (মুসলিম ১২৯১, আবু দাউদ : ৭৪৯ ) দুই সাজদার মাঝখানে পঠিত দোয়া- ‘রব আমাকে ক্ষমা কর, প্রতিপালক আমাকে মাফ কর।' (আবু দাউদ : ৭৪০, নাসাঈ : ১১৩৩) ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ কর, আমাকে রহম কর, তুমি আমাকে নিরাপত্তা দান কর, তুমি আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত কর এবং তুমি আমাকে রিযিক দান কর।' (আবু দাউদ : 728 )

৬. তাশাহুদঃ- যাবতীয় ইবাদত ও অর্চনা মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক সমস্তই আল্লাহর জন্য, হে নবী আপনার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক, আমাদের উপর ও নেক বান্দাদের উপর শান্তি অবতীর্ণ হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই এবং আরো সাক্ষী দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।' (বুখারী : ১১২৭, তিরমিযি : ২৬৬) ৭. তাশাহুদের পর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর দুরুদ পাঠঃ- ‘হে আল্লাহ ! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরগণের প্রতি রহমত নাযিল কর যেমনটি করেছিলে ইবরাহিম ও তাঁর বংশধরের প্রতি, নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়। তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর স্ত্রীগণের এবং সন্তানগণের উপর বরকত নাযিল কর যেমনটি করেছিলে ইব্রাহিম এর বংশধরগণের উপর, নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয়, সম্মানীয়।' (বুখারী : ৩১১৯, ইবনে মাজাহ : ৮৯৬)

৮. সালাম ফিরানোর পূর্বে পঠিত দোয়াঃ- ‘হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অনেক বেশি যুলুম করেছি, আর তুমি ছাড়া গুনাহসমূহ কেউই মাফ করতে পারে না, সুতরাং তুমি তোমার নিজ গুণে আমাকে মার্জনা করে দাও এবং আমার প্রতি তুমি রহম কর, তুমিতো মার্জনাকারী ও দয়ালু।' (বুখারী : ৭৯০) ৯. সালাম ফিরানোর পর দোয়াঃ- 'আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময় আর তোমার নিকট হতেই শান্তির আগমন, তুমি কল্যাণময়, হে মর্যাদাবান এবং কল্যাণময় তুমি।' (মুসলিম : ৯৩১) ১০. আত্মশুদ্ধি অর্জনের দোয়াঃ- 'হে আল্লাহ আমাকে তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধি দান করুন, আপনি পরিশুদ্ধকারীদের মধ্যে সর্বোত্তম, আপনি হলেন আমার অভিভাবক ও মনিব।' (মুসলিম : ৪৮৯৯, নাসাঈ : ৫৩৬৩)

১১. সকাল বেলায় পড়ার দোয়াঃ- ‘হে আল্লাহ! আমরা তোমারই অনুগ্রহে প্রত্যুষে উপনীত হই এবং তোমারই অনুগ্রহে সন্ধ্যায় উপনীত হই। তোমারই মর্জিতে আমরা জীবিত রয়েছি, তোমারই ইচ্ছায় আমরা মৃত্যুবরণ করব, আর তোমারই দিকে কিয়ামত দিবসে উত্থিত হয়ে সমবেত হব।' (আবু দাউদ : ৪৪০৬) ১২. সন্ধ্যা বেলায় পড়ার দোয়াঃ- ‘হে আল্লাহ! আমরা তোমারই অনুগ্রহে সন্ধ্যায় উপনীত হই এবং তোমারই অনুগ্রহে প্রত্যুষে উপনীত হই। তোমারই মর্জিতে আমরা জীবিত রয়েছি, তোমারই ইচ্ছায় আমরা মৃত্যুবরণ করি, আর তোমারই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে।' (আবু দাউদ : ৪৪০৬ ) ১৩. শয়ন করার দোয়া ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নাম নিয়েই শয়ন করছি এবং তোমার নাম নিয়েই উঠব।' (বুখারী : ৫৮৩৭, তিরমিযি : ৩৩৩৯) ১৪. ঘুমন্ত অবস্থায় ভয় পেলে যে দোয়া পড়তে হয়ঃ- ‘আমি পরিত্রাণ চাই আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের মাধ্যমে তাঁর গযব হতে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট হতে, শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে এবং তাদের উপস্থিতি হতে।' (মুয়াত্তা মালেক : ১৪৯৬)

১৫. রোগী দেখতে গিয়ে তার জন্য যে দোয়া করতে হয়ঃ- ‘আমি তোমার রোগ মুক্তির জন্য আরশে আযিমের মহান প্রতিপালক আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।' (আবু দাউদ : ২৭০০ ) ১৬. বিপদ ও দুশ্চিন্তায় পড়াকালে দোয়াঃ- ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি চিন্তা-ভাবনা, অপারগতা, অলসতা, কৃপণতা এবং কাপুরুষতা থেকে, অধিক ঋণ থেকে এবং দুষ্ট লোকের প্রাধান্য থেকে।' (বুখারী : ২৬৭৯) ১৭. জানাযার সালাতে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়াঃ- ‘হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড়, পুরুষ ও মহিলাদেরকে ক্ষমা করে দাও, হে আল্লাহ! আমাদের মাঝে যাদের তুমি জীবিত রেখেছো তাদেরকে তুমি ইসলামের উপর জীবিত রাখো, আর যাদেরকে মৃত্যু দান করো তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করো, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তার সাওয়াব হতে বঞ্চিত করো না আর তার মৃত্যুর পর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করো না ।' (আবু দাউদ : ২৭৮৬)

১৮. শয়তান, ক্রোধ ও কুমন্ত্রণা দূর করার দোয়াঃ- ‘আমি আশ্রয় চাই আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তান থেকে'। (বুখারী : ৫৬৫০, মুসলিম : 4725) ১৯. শত্রুর উপর বিজয় লাভের দোয়াঃ- ‘হে আল্লাহ! কিতাব নাযিলকারী, ত্বরিত হিসাব গ্রহণকারী, শত্রুবাহিনীকে পরাজিত ও প্রতিহত করো, তাদেরকে দমন ও পরাজিত করো এবং তাদের মধ্যে কম্পন সৃষ্টি করে দাও।' (বুখারী : ২৭১৬) ২০. হালাল উপার্জন ও ঋণ পরিশোধের দোয়াঃ- 'হে আল্লাহ তুমি তোমার হারাম বস্তু হতে বাঁচিয়ে তোমার হালাল রিযিক দ্বারা আমাকে পরিতুষ্ট করে দাও এবং হারামের দিকে যাওয়ার প্রয়োজন ও প্রবণতাবোধ যেন না করি। এবং তোমার অনুগ্রহ অবদান দ্বারা তুমি ভিন্ন অন্য সকল হতে আমাকে অমুখাপেক্ষী করে দাও ৷' (তুমি ছাড়া যেন আমাকে আর কারো মুখাপেক্ষী হতে না হয়) (তিরমিযি : ৩৪৮৬, মুসনাদে আহমাদ : ১২৫০ )

২১. হজ ও ওমরার তালবিয়াহঃ- 'হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে হাজির, আমি তোমার দরবারে উপস্থিত, আমি তোমার দরবারে হাজির, তোমার কোনো অংশীদার নেই, তোমার দরবারে উপস্থিত হয়েছি। সর্বপ্রকার প্রশংসা এবং নেয়ামতের সামগ্রী সবইতো তোমার, সর্বযুগে ও সর্বত্র তোমারই রাজত্ব, তোমার কোনো অংশীদার নেই' (বুখারী : ১৪৪৮, মুসলিম : 2029 ) ২২. বিতর সালাতে পঠিত দোয়ায়ে কুনুতঃ- হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি, আর তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি, তোমার প্রতি ঈমান রাখি, তোমার উপরই ভরসা করি, তোমারই উত্তম প্রশংসা করি, তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি আর তোমার কুফরি করি না, আর তোমার সাথে যে কুফরি করে আমরা তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি । হে আল্লাহ! আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি, তোমারই জন্য সালাত আদায় করি ও সিজদা করি, তোমারই দিকে দৌড়াই এবং তোমারই আনুগত্যের প্রতি উৎসাহী হই, তোমারই রহমতের আশা পোষণ করি, তোমার আযাবের ভয় করি, নিশ্চয়ই তোমার আযাব কাফেরদেরকে বেষ্টন করবেই।' (তবারানি : ২৬৪৫ )

২৩. বৈঠকের সমাপ্তিকালে দোয়াঃ- হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া ইবাদাতের উপযুক্ত আর কোনো মাবুদ নেই, আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি আর তোমার দিকেই ফিরে যাচ্ছি।' (তিরমিযি :৩৩৫৫, আবু দাউদ : ৪২১৬) ২৪. জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়াঃ- 'হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট জান্নাতের প্রার্থনা করছি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাচ্ছি।' (আবু দাউদ : ৬৭২, মুসনাদে আহমাদ: ১৫৩৩৩)

পরিশেষে

আযান ও ইকামতের মাঝে দোয়া কবুলের কথা বর্ণিত আছে- ‘আযান ও ইকামাতের মাঝের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।' (আবু দাউদ : 809 ) এ ছাড়াও তিনি কারো জন্য দোয়া করলে অনুপস্থিতে করলে কবুল হওয়ার কথা বলেন ও দোয়া এর ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন অর্থাৎ দোয়া সংক্ষিপ্ত আকারে করা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url