ইবাদত ও দাসত্বের পরিচয় এবং গুরুত্ব

ইবাদত দাসত্ব ও আনুগত্য

ইবাদত শব্দটি আরবী। আল্লাহ তায়ালার দাসত্ব ও আনুগত্য স্বীকার করে তাঁর আদেশ পালন ও নিষেধ বর্জন করে জীবন পরিচালনাকে ইসলামী পরিভাষায় ইবাদত বলে। ইসলাম হলো পরিপূর্ণ জীবন বিধান 1 ইসলামের মৌলিক পাঁচটি বিষয় যথা কালিমা, সালাত, সাওম, যাকাত ও হজসহ যাবতীয় আদেশ নিষেধ যথাযথ পালনের নাম ইবাদত। আবার মানব জীবনের প্রতিটি কাজ ইসলামী বিধিবিধান অনুযায়ী সম্পন্ন করাও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত । পৃথিবীর সকল কিছু মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আর মানুষ ও জিন জাতিকে শুধু আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।

ইবাদত ও দাসত্বের পরিচয় এবং গুরুত্ব

ইবাদত ও দাসত্ব

মহান আল্লাহ বলেন- ‘আমি জিন ও মানুষকে আমারই ইবাদত করা ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করি নাই।' (যারিয়াত, ৫১ : ৫৬) আমরা যত ইবাদত করি তার মূল উদ্দেশ্য হলো আমাদের সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, প্রতিপালক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা। ইবাদত যদি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তায়ালার জন্য না হয় তবে তিনি তা কবুল করবেন না । কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে- ‘তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করবে, সালাত কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে, আর এটাই সঠিক দীন।' (বাইয়্যিনাহ, ৯৮ : ৫)

কিভাবে ইবাদত করলে ও জীবনযাপন করলে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হবেন, তা শেখানোর জন্য নবী-রাসূলগণ প্রেরিত হয়েছেন। ইবাদত করা আল্লাহ তায়ালার হক উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘বান্দার উপর আল্লাহর হক হচ্ছে বান্দা আল্লাহর ইবাদত করবে ও তাঁর সাথে অন্য কারো শরিক করবে না।' (বুখারী : ৫৭৯৬, মুসলিম : ৪৩) এরপরই তিনি আল্লাহ তায়ালার উপর বান্দার হক সম্পর্কে বলেন- ‘আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হচ্ছে বান্দা আল্লাহর ইবাদত করলে ও আল্লাহর সাথে অন্য কোনো কিছুর শরিক না করলে আল্লাহর তায়ালা তাকে কোনো আযাব প্রদান করবেন না।' (বুখারী : ৫৭৯৬, ইবনে মাজাহ : ৪২৮৬) ইবাদতের ক্ষেত্রে মূলনীতি উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভি তাঁর গ্রন্থের এ বলেন- ‘ইবাদতের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো নিষিদ্ধতা।'

ইবাদতের ক্ষেত্রে শরীয়তের সিদ্ধান্ত হলো- শরীয়ত প্রবর্তনকারীর পক্ষ থেকে ইবাদতটির প্রমাণিত হওয়া বাধ্যতামূলক। প্রমাণ ও দলীল ছাড়া আন্দাজ-অনুমানের ভিত্তিতে কোনো বিষয়কে ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো বিবেক- বুদ্ধি ও জ্ঞানের। যদি মানুষ সে বিবেক-বুদ্ধি ও জ্ঞান দিয়ে দয়াময় আল্লাহর ইবাদত করতে না পারে তাহলে সে চতুষ্পদ জন্তু কিংবা তার চেয়েও অধম হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আমি তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি; তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তাদ্বারা তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু আছে তাদ্বারা তারা দেখে না, তাদের কান আছে তাদ্বারা তারা শোনে না, এরা পশুর মতো বরং এরা অধিক পথভ্রষ্ট। এরাই গাফিল।' (আরাফ, ৭ : ১৭৯)

ইবাদত বলতে শুধু নামায, রোযা, হজ প্রভৃতি কতিপয় ধর্মীয় বিধান পালনকেই বোঝায় না বরং মুসলমানদের পুরো জীবনের সকল কাজ-কর্ম, আচার-অনুষ্ঠান, চাকরি-বাকরি সকল কিছুই যদি আল্লাহ তায়ালার বিধান মতো করা হয় তা ইবাদত বলে গণ্য হবে। আল কুরআনে বলা হয়েছে- ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করো না এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করো।' (বনী ইসরাঈল, ১৭ : ২৩) ইবাদত করা ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন- ‘আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি।' (নাহল, ১৬ : ৩৬)

পরিশেষে

আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাৎ প্রত্যেক মুমিন জীবনের একান্ত আকাঙ্ক্ষা। আর আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন- ‘যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।' (কাহাফ, ১৮ : ১১০) আল্লাহ তায়ালার আদিষ্ট কাজগুলো পরিপূর্ণভাবে আদায় করে ব্যবসা- বাণিজ্য, চাকরি, কৃষিকাজ ও বৈধ পন্থায় সম্পদ উপার্জন এবং দুনিয়ার অন্য সব ভালো কাজ করা ইবাদত। এমনিভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসা, তাঁর রহমতের প্রত্যাশা, শাস্তির ভয়, ইখলাস, সবর, শুকুর, তাওয়াক্কুল ইত্যাদি কাজই ইবাদতের শামিল ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url