পাপ পুণ্য ও ভাল মন্দের বিশদ বিবরণ

পাপ পুণ্য ও ভাল মন্দ

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষকে শুধুমাত্র জীবন দান করেই ক্ষান্ত হন নাই । মানুষকে তিনি অনন্য বৈশিষ্ট্য ও শক্তি-সামর্থ্য দিয়েছেন। পৃথিবীতে ভালো ও মন্দ উভয় কাজ করার স্বাধীনতা মানুষের রয়েছে। ইসলামের পরিভাষায় যাবতীয় মন্দ কাজকে পাপ ও ভালো কাজকে পুণ্য হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

পাপ পুণ্য ও ভাল মন্দের বিবরণ

পাপ পুণ্য

নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এক সাহাবী পাপ ও পুণ্যের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘পুণ্য হলো তা, যার প্রতি তোমার মন প্রশান্ত হয় এবং অন্তর পরিতৃপ্ত হয় । আর পাপ হলো তা, যা তোমার মনে খটকা সৃষ্টি করে এবং অন্তর সন্দিহান হয়; যদিও লোকেরা তোমাকে তা বৈধ বলে ফতোয়া দেয়।' (মুসনাদে আহমাদ : ১৭৩১৩) ইসলাম সর্বদা কৃত্রিম ধারণা ও সংস্কারের বিরুদ্ধে । প্রাণহীন আনুষ্ঠানিকতায় কোনো পুণ্য নেই ।

পুণ্যবান লোকের পরিচয়

পুণ্য কাজের পরিচয় দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতে কোনো পুণ্য নেই বরং পুণ্যের কাজ হলো এই যে, তোমরা আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতা, সমস্ত কিতাব এবং নবীগণের উপর বিশ্বাস পোষণ করবে। সম্পদের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও তোমরা তা আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন, পথিক, সাহায্যপ্রার্থী ও ক্রীতদাসের মুক্তির জন্য ব্যয় করবে। সালাত প্রতিষ্ঠা করবে ও যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা করবে। ওয়াদা ও চুক্তি করলে তা পালন করবে। দারিদ্র্য, সঙ্কীর্ণতা ও বিপদ-আপদের সময় ধৈর্য ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করবে।' (বাকারা, ২ : ১৭৭) উপর্যুক্ত আয়াতে পুণ্যবান লোকের একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পরিচয় প্রদান করা হয়েছে। এটা সুস্পষ্ট যে, শুন্যগর্ভ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সম্পাদিত কোনো কর্ম সুকৃতি বা পুণ্যকাজ নয়। পুণ্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে সুদৃঢ় বিশ্বাস ও অব্যাহত অনুশীলনের মাধ্যমে। সকল অন্যায়, অবৈধ কাজ বা কথা অসৎ কর্মের অন্তর্গত। হারাম বা সুস্পষ্ট নির্দেশের বরখেলাফ কাজকেই অসৎ বা পাপ কাজ হিসেবে গণ্য। যা কিছু অবৈধ তা অন্যায়। যা কিছু অন্যায় তা বর্জনীয়। মহান আল্লাহ তাই নির্দেশ দিয়েছেন সীমালংঘন না করতে। ইসলামে হালাল-হারামের সীমারেখা দেওয়া রয়েছে যেন একজন মানুষ এই সীমারেখা অতিক্রম না করে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘পাপ ও সীমালংঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না।' (মায়িদা, ৫ : ২) পাপ ও পুণ্যের প্রতিফল দেওয়া সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন- ‘আল্লাহ বলেন- কেউ কোনো পাপ কাজের ইচ্ছা পোষণ করে তা সম্পাদন না করা পর্যন্ত লিখা হয় না। অতঃপর যে কেউ তা সম্পাদন করে ফেলে তার জন্য একটি মাত্র গোনাহ লেখা হয়। আর সে যদি সম্পাদন না করে তা পরিত্যাগ করে তাহলে তার আমলনামায় পূর্ণ সওয়াব লেখা হয়। কেউ যদি সৎ কাজের ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে তার আমলনামায় কাজের পূর্ণ সওয়াব লেখা হয়। আর সে যদি তা সম্পাদন করে তখন তার জন্য দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত; এমনকি এর চেয়ে অধিক সওয়াব লেখা হয়।' (তবারানি : ৮২৫) মহান আল্লাহ প্রতিদান দিবসে সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করবেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহে বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে তিনি তার পাপ মোচন করবেন এবং তাকে দাখিল করবেন জান্নাতে।' (তাগাবুন, ৬৪ : ৯) কিয়ামতের দিন পাপ পুণ্যের নির্ভুল বিচার হবে এবং প্রত্যেক মানুষকে তার আমলনামা বা কার্যবিবরণী দেওয়া হবে। পৃথিবীতে মানুষ যেসব পাপ ও পুণ্য কাজ করেছে, পরকালে তার প্রতিদান দেওয়া হবে। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে বলেন- ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে সে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে সে তাও দেখবে।' (যিল্যাল, ৯৯ : ৭-৮)

খারাপ বা পাপ কাজের ফলাফল

খারাপ বা পাপ কাজ সমাজ ও ব্যক্তির কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। পাপের চূড়ান্ত পরিণতিতে ব্যক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রে ভয়াবহ বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। পাপ ব্যক্তির নিজেরই ক্ষতি করে, আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘কেউ পাপ কাজ করলে সে তা নিজের ক্ষতির জন্যই করে।' (নিসা, ৪ : ১১০) মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য হলো মানব তার জীবনের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবে। এ ক্ষেত্রে কেউ ধোঁকায় পড়ে কোনো পাপ কাজ করার পর অনুতপ্ত হয়ে তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তা ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা করে বলেন- ‘কেউ মন্দ কাজ করে বা নিজের উপর যুলুম করার পরে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু হিসেবে পাবে।' (নিসা, ৪ : ১১০) কিন্তু যারা তওবা করে, নিজেদেরকে সংশোধন করে, আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করে এবং আল্লাহর উদ্দেশে দীনের উপর একনিষ্ঠ থাকে, তারা মুমিনদের সঙ্গে থাকবে এবং মুমিনগণকে আল্লাহ অবশ্যই মহা পুরস্কার দিবেন।' (নিসা, ৪ : ১৪৬)

পরিশেষে

অতএব সত্য পথ হতে বিচ্যুত না হবার জন্য প্রার্থনা করতে মানুষকে আহ্বান করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার নিকট মানুষের প্রতিনিয়ত প্ৰাৰ্থনা হতে হবে যেন সে সত্যপথে দৃঢ় থাকতে পারে। আল্লাহ তায়ালা সুন্দর ও সত্যাশ্রয়ী মানুষের প্রার্থনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন- ‘এই কথা ব্যতীত তাদের আর কোনো কথা ছিল না, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পাপ এবং আমাদের কাজে সীমালংঘন তুমি ক্ষমা কর, আমাদের পা সুদৃঢ় রাখ এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর।' (আলে ইমরান, ৩ : ১৪৭ )

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url