মানবজীবনে সালাত বা নামাযের ভূমিকা-পর্বঃ০১

মানবজীবনে সালাত বা নামাযের ভূমিকা-পর্বঃ০১

সালাত বা নামায

সালাত (i) আরবী শব্দ, এর ফার্সি প্রতিশব্দ হলো নামায। আভিধানিক অর্থ দোয়া, ক্ষমা প্রার্থনা, রহমত প্রেরণ, কামনা করা ইত্যাদি। পরিভাষায় নির্দিষ্ট রুকন ও যিকরসমূহকে বিশেষ পদ্ধতিতে নির্ধারিত সময়ে আদায় করাকে সালাত বলা হয় যার মধ্যে রুকু, সিজদা, কিয়াম, কিরাত প্রভৃতি রয়েছে। যেহেতু সালাতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করে, রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা করে তাই একে সালাত বলা হয়। সালাত হচ্ছে ইসলামের মৌলিক ভিত্তিগুলোর অন্যতম । রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মিরাজ রজনীতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর সালাত ফরয করেছেন। সকল প্রাপ্তবয়স্ক, বুদ্ধিমান, পূতপবিত্র প্রতিটি মুসলিম নর- নারীর উপর নির্ধারিত সময়ে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা অবশ্য পালনীয় ফরয। আল্লাহ তায়ালা সালাতের নির্দেশ দিয়ে বলেন- ‘সালাত কায়েম করো ও যাকাত আদায় করো এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো।' (বাকারা, ২:৪৩ ) তিনি আরো বলেন- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা রুকু করো, সিজদা করো এবং তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত করো।' (হজ, ২২ : ৭৭) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দাদের উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন।' (মুসলিম : ২৮)

ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সাইন্স প্রশিক্ষন কেন জরুরী

সালাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা সকল কাজের হিসাব নিবেন। এর মধ্যে সালাতের হিসাব নিবেন সর্বপ্রথম। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘কিয়ামতের দিন মানুষের আমলগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম যার হিসাব নেওয়া হবে, তা হলো সালাত।' (আবু দাউদ : ৭৩৩ ) কুফর ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত। একজন ঈমানদার ব্যক্তি সালাত পরিত্যাগ করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘সালাত ছেড়ে দেওয়া হলো কুফর ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য।' (তিরমিযি : ২৫৪৩) সালাত কিভাবে গুনাহ থেকে দূরে রাখে তার একটি চমৎকার উদাহরণ দিয়ে রাসূলুল্লাহ তাঁর সাহাবীদের উদ্দেশ করে বলেন- ‘তোমাদের কারো বাড়ির সামনে যদি একটি প্রবহমান নদী থাকে এবং সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে তাহলে তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে? সাহাবীরা বললেন, না তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে না। রাসূলুল্লাহ বললেন, এটা হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেন।' (বুখারী : ৪৯৭) হযরত ওমর (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)" তাঁর প্রশাসকদের নিকট এ মর্মে পত্র প্রেরণ করতেন যে, আমার মতে তোমাদের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে সালাত। যে ব্যক্তি সালাতের হিফাযত করল সে তার দীনের হিফাযত করল। আর যে ব্যক্তি তা বরবাদ করল সে অন্য আমলকেও চরমভাবে বরবাদ করে দিবে।

সালাতের উপকারিতা ও ফযীলত

সালাত যেহেতু আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্যের বাস্তব রূপ ও আল্লাহর সাথে মিরাজ সমতুল্য। কাজেই আল্লাহকে হাযির-নাযির জেনে অন্তরে আল্লাহর ভয় রেখে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আনুগত্যের ধ্যানসহ সালাত আদায় করা হয় তাহলে ব্যক্তির আত্মিক উন্নতি হবে। কুরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে— ‘অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়-নম্রতা অবলম্বন করে।' (মুমিনুন, ২৩ : ১-২) সালাত একজন মুমিনকে মন্দ ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, গুনাহের কাজ করা থেকে বিরত রাখে। সালাত মানুষের আত্মাকে কলুষমুক্ত রাখতে সহায়ক। আল্লাহ তায়ালা বলেন- “নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ।' (আনকাবূত, ২৯ : ৪৫) সালাত যেহেতু আল্লাহর মহব্বত ও আনুগত্য প্রকাশের অন্যতম পন্থা, তাই এর মাধ্যমে আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। এ কারণেই সালাতকে জান্নাতের চাবি বলা হয়েছে।

সালাত পরিত্যাগকারীর অবস্থা

সালাত পরিত্যাগ করা কবীরা গুনাহ। রাসূলুল্লাহ সালাত তরককারীর প্রতি কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন- ‘যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করল সে যেন প্রকাশ্যভাবে কুফরি করল।' (তবারানি : ৩৪৭৯) অপর হাদীসে এসেছে- ‘বান্দা ও কুফরির মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত তরক করা।' অর্থাৎ সালাত তরক করাই প্রমাণ করে যে, কে আল্লাহর বান্দা এবং কে অস্বীকারকারী কাফির। বেনামাযী ব্যক্তি কিয়ামতের দিন চরমভাবে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হবে। কুরআনুল কারীমে এরশাদ হয়েছে— ‘স্মরণ কর, সেই চরম সংকটের দিনের কথা, যেদিন তাদেরকে আহ্বান করা হবে সিজদা করার জন্য; কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত, হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল তখন তো তাদেরকে আহ্বান করা হয়েছিল সিজদা করতে।' (কালাম, ৬৮ : ৪২-৪৩ ) আলোচ্য আয়াতের সারমর্ম হলো, কিয়ামতের দিন যখন সর্বকালের সকল মানুষ সমবেত হবে তখন ঘোষণা করা হবে যে, তোমরা সকলে আল্লাহর সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়। এ ঘোষণার পর সালাত আদায়কারীগণ সিজদায় লুটিয়ে পড়বে কিন্তু বেনামাযীগণ সিজদা করতে সক্ষম হবে না । তাদের পিঠ কাঠের মত শক্ত হয়ে যাবে ।

সালাতের ওয়াক্ত

প্রতিদিন নির্দিষ্ট পাঁচবার সালাত আদায় করা ফরয। নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা সালাত কায়েম করবে, নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।' (নিসা, ৪ : ১০৩) তিনি আরো বলেন- ‘সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করবে এবং কায়েম করবে ফজরের সালাত। নিশ্চয়ই ফজরের সালাত উপস্থিতির সময়।' (বনী ইসরাঈল, ১৭ : ৭৮) আল্লাহ তায়ালা হযরত জিবরাঈল এর মাধ্যমে নবী করিম কে সালাত আদায়ের পদ্ধতি এবং সালাতের সময় জানিয়ে দিয়েছেন। হাদীসে ইমামতে জিবরাঈল এর ভিত্তিতে ইসলামী ফিকহ বিশারদগণ সালাতের সময়সীমা বর্ণনা করেছেন। সুবহে সাদিক হলেই ফজর সালাতের সময় শুরু হয়। সূর্য উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত ফজর সালাতের সময় বাকি থাকে। সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার সাথে সাথে যোহরের সালাতের ওয়াক্ত শুরু হয়। প্রত্যেক জিনিসের ছায়া সমপরিমাণ অথবা দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত যোহর সালাতের ওয়াক্ত বাকি থাকে। গরমের সময় সালাত বিলম্বে এবং শীতের মৌসুমে প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। যোহরের সালাতের সময় শেষ হওয়ামাত্রই আসর সালাতের সময় শুরু হয়। সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যদিও আসর সালাতের সময় বাকি থাকে তবে সূর্যের আলো ফ্যাকাশে হওয়ার পর মাকরূহ হয়ে যায়। সূর্যাস্তের পরপরই মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয়। পশ্চিমাকাশে লালিমা বিলুপ্তকাল পর্যন্ত মাগরিবের সময় বাকি থাকে। সূর্যাস্তের মাগরিবের সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। পশ্চিমাকাশে লালিমা বিলুপ্ত হওয়ার পর আকাশপ্রান্তে যে সাদা আভা চোখে পড়ে তা বিলুপ্ত হওয়ার পর এশার সালাতের ওয়াক্ত শুরু হয়। সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত এশার ওয়াক্ত বাকি থাকে তবে দ্বিপ্রহর রাতের পর বিনা ওযরে দেরি করা মাকরূহ। এশার সালাত বিলম্ব করে রাতের এক তৃতীয়াংশ হওয়ার পূর্বে আদায় করা মুস্তাহাব। এশার সালাত আদায় করার পরই বিতরের সময় শুরু হয়। ফজর সালাতের পূর্ব পর্যন্ত এর সময় বাকি থাকে।

সালাত আদায়ের নিষিদ্ধ সময়

তিন সময়ে সালাত পড়া নিষিদ্ধ: সূর্যোদয়ের সময়, ঠিক দুপুর সময় এবং সূর্যাস্তের সময়। হাদীসে বর্ণীত হয়েছে ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে নির্ধারিত তিন সময়ে সালাত আদায় করতে এবং মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করেছেন। সূর্যোদয়ের সময় যতক্ষণ না সূর্য উপরে উঠবে, সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় যতক্ষণ না অস্ত যাবে এবং সূর্য পশ্চিমাকাশে চলে পড়ার সময় যতক্ষণ না ঢলে পড়ে ।' (মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক : ৬৫৬৯) এই তিন সময়ে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল সব ধরনের সালাত নিষিদ্ধ এবং সিজদায়ে তিলাওয়াতও নিষিদ্ধ । যে সময় সালাত আদায় করা মাকরূহ প্রস্রাব, পায়খানার বেগ হলে বা বায়ু নিঃসরণের প্রয়োজন থাকা অবস্থায় সালাত আদায় করা মাকরূহ। পানাহার উপস্থিত থাকা অবস্থায় ক্ষুধার্তের জন্য পানাহারের আগে সালাত আদায় করা মাকরূহ। এরূপ পরিস্থিতিতে প্রয়োজনগুলো সেরে তবেই সালাতে মনোনিবেশ করতে হবে, যাতে করে নিবিষ্ট মনে সালাত আদায় করা যায় । যে সময় শুধু সুন্নত বা নফল সালাত আদায় করা মাকরূহ ১. জামাত আরম্ভ হয়ে গেলে । ২. জুমা, দুই ঈদ, বিয়ে বা হজের খুৎবা দেওয়ার জন্য ইমাম নিজের জায়গা থেকে উঠলে । ৩. ফজরের সালাতের পর থেকে সূর্যোদয় হয়ে আলো ছড়িয়ে না পড়া পর্যন্ত ৪. ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্য কোনো নফল আদায় করা। ৫. আসর সালাতের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। ৬. ঈদের সালাতের পূর্বে ঘরে বা মাঠে এবং সালাতের পর ঈদের ময়দানে। ৭. আরাফাতের ময়দানে যোহর-আসরের মাঝে এবং আসরের পরে। ৮. হজের সময় মুযদালিফায় মাগরিব-এশার মাঝে ও পরে।

সালাতের ফরযসমূহ

সালাতের ফরয ১৪টি, এগুলোর একটিও ছুটে গেলে সালাত বাতিল হয়ে যাবে। এর মধ্যে সালাতের পূর্বে (আহকাম) ৭টি এবং সালাতের ভিতরে (আরকান) ৭টি ফরয রয়েছে। সালাতের শর্তাবলি বা আহকাম ১. সমুদয় অপবিত্রতা থেকে শরীর পবিত্র হওয়া । ২. পরিধেয় পোশাক পবিত্র হওয়া । ৩. সালাতের জায়গা পবিত্র হওয়া । ৪. সতর ঢাকা। পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং মহিলাদের জন্য দুহাতের কব্জি, পদদ্বয় এবং মুখমণ্ডল ছাড়া সমস্ত দেহ ঢেকে রাখতে হবে। ৫. সালাতের ওয়াক্ত হওয়া। ৬. কিবলমুখী হওয়া এবং ৭. নিয়ত করা। সালাতের আরকান সালাতের ভিতরে ৭টি কাজ ফরয: ১. তাকবিরে তাহরীমা বলা ২. সক্ষম ব্যক্তির দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা ৩. কিরাত পাঠ করা ৪. রুকু করা, ৫. সিজদা করা ৬. শেষ বৈঠকে বসা ও ৭. সালামের মাধ্যমে সালাত সমাপ্ত করা।

সালাতের ওয়াজিবসমূহ

সালাতের ওয়াজিব বলতে ঐসব করণীয় বিষয় বোঝায়, ভুলক্রমে যার কোনো একটিও ছুটে গেলে ‘সিজদায়ে সাহু' করতে হয়। ভুলবশত বা স্বেচ্ছায় সিজদায়ে সাহু না করা হলে পুনরায় সালাত আদায় করা ওয়াজিব । সালাতের ওয়াজিব ১৪টি: ১. সূরা ফাতিহা পড়া ২. ফরয সালাতের প্রথম দুরাকাতে এবং ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল সালাতের সব রাকাতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা পড়া । ৩. প্রথমে সূরা ফাতিহা পরে অন্য সূরা পাঠ করা । ৪. কিরায়াত, রুকুও সিজদার মধ্যে ক্রমধারা ঠিক রাখা । ৫. রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো। ৬. দুই সিজদার মাঝে সোজা হয়ে বসা । ৭. রুকু ও সিজদা এবং এর মধ্যবর্তী সময়ে এক তাসবীহ পরিমাণ সময় স্থির থাকা। ৮. তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট সালাতে দুই রাকাতের পর বসা । ৯. প্রথম ও শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পাঠ করা । ১০. জেহরী সালাতের প্রথম দুই রাকাতে ইমামের উচ্চৈঃস্বরে কিরায়াত পাঠ করা। ১১. সালাম ফিরানো । ১২. বিতর সালাতে দোয়ায়ে কুনুত পড়া ১৩. দুই ঈদের সালাতে অতিরিক্ত তাকবির বলা ।

সালাতের সুন্নতসমুহ

১. তাকবিরে তাহরিমা বলার পূর্বে পুরুষের কানের লতি এবং মহিলার কাঁধ পর্যন্ত দুহাত উঠানো। ২. তাকবিরে তাহরিমার সময় দুহাতের আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিকভাবে কিবলামুখী ও খুলে রাখা । ৩. তাকবিরে তাহরিমা বলে হাত বাঁধা । ৪. তাকবিরে তাহরিমার সময় মস্তক অবনত না করা। ৫. তাকবিরে তাহরিমা এবং এক রুকন থেকে অন্য রুকনে যাওয়ার সময় ইমামের জন্য তাকবির উচ্চৈঃস্বরে বলা । ৬. সানা পাঠ করা । ৭. প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পূর্বে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পড়া ৷ ৮. আমীন বলা। যে সালাতে ইমাম উচ্চৈঃস্বরে কিরায়াত পড়বে সে সালাতে সূরা ফাতিহা শেষ হওয়ার পর ইমাম ও মুক্তাদী সবাইকে আমীন বলতে হয় । একাকী সালাত আদায়কারীরও একই হুকুম ৯. ফরয সালাতের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে শুধুমাত্র সূরা ফাতিহা পড়া ১০. সানা, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ আস্তে পড়া । ১১. রুকু ও সিজদায় কমপক্ষে তিনবার করে তাসবীহ পড়া। ১২. রুকুতে মাথা পিঠ এবং কোমর সোজা রেখে দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে উভয় হাঁটু ধরা। ১৩. রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময় ইমামের ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ' এবং মুক্তাদির ‘রাব্বানা লাকাল হামদ' বলা । ১৪. সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাঁটু তারপর হাত, তারপর নাক তারপর কপাল রাখা। ১৫. বসা অবস্থায় দুহাত হাঁটুর উপর রাখা। বাম পা বিছিয়ে পায়ের উপর বসা আর ডান পা এমনভাবে খাড়া রাখা যেন আঙ্গুলগুলোর মাথা কিবলার দিকে থাকে । ১৬. শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পাঠের পর দরূদ শরিফ পড়া । ১৭. দরূদ শরিফ পড়ার পর মাসনুন দোয়া পড়া । ১৮. প্রথমে ডানে এবং পরে বামে সালাম ফিরানো ।

সালাতের মুস্তাহাবসমূহ

১. পুরুষের জন্য তাকবিরে তাহরিমার সময় চাদর বা জামার হাতা থেকে হাত বাইরে রাখা। মহিলাদের জন্য হাত বের না করেই তাকবিরে তাহরিমা বলা । ২. সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার জায়গার দিকে রুকু অবস্থায় দুপায়ের উপর, বসে থাকার সময় দুই হাঁটুর উপর এবং সালাম ফিরোনোর সময় দুই কাঁধের প্রতি দৃষ্টি রাখা। ৩. রুকু ও সিজদার তিনবারের বেশি তাসবীহ পড়া । ৪. যথাসম্ভব কাশি দাবিয়ে রাখা এবং ৫. হাই এলে মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করা ।

সালাতের রাকাতসমূহ

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা ফরয। ফরযের পাশাপাশি প্রত্যেক ওয়াক্তেই ওয়াজিব, সুন্নত এবং নফল সালাত রয়েছে, নিম্নে তা পেশ করা হলো- ফজর: ফজর সালাতে দুই রাকাত ফরয রয়েছে তবে প্রথমে দুই রাকাত সুন্নত রয়েছে। যোহর: যোহরের সালাতে চার রাকাত ফরয রয়েছে। ফরযের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এবং পরে দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা রয়েছে । আসর: আসরের সালাত চার রাকাত পড়া ফরয। ফরযের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা । মাগরিব: মাগরিবে তিন রাকাত ফরয। ফরযের পর দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা রয়েছে। এশা: এশার চার রাকাত ফরয সালাত রয়েছে। ফরযের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা এবং পরে দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। অতঃপর তিন রাকাত বিতর ওয়াজিব সালাত রয়েছে।

সালাত ভঙ্গের কারণসমূহ

১. ইচ্ছা-অনিচ্ছাপূর্বক ফরয এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়াজিব ও সুন্নত তরক করা । ২. নামাজের ভেতর অল্প হোক রা বেশি হোক, কথা বললেই সালাত ভঙ্গ হবে। ৩. ফরয সালাতের মধ্যে কুরআন মাজীদ দেখে পড়লে । ৪. বিনা প্রয়োজনে অনবরত গলা পরিষ্কার করা । ৫. দুঃখ-কষ্ট বা বেদনার কারণে উহ আহ ইত্যাদি আওয়ায করা । ৬. সালাতের মধ্যে এমন কাজ করা যে বাইরের কেউ দেখে মনে করবে সে সালাত আদায় করছে না। ৭. ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সালাত অবস্থায় পানাহার করা । ৮. ক্ষুরআন তিলাওয়াতে এমন ভুল করা যাতে অর্থ বিগড়ে যায়। ৯. অট্টহাসি দেওয়া ।

সার সংক্ষেপ

মানবজীবনে সালাত বা নামাযের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের মধ্যে একটি, এবং মুসলিমদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে নির্ধারিত তিন সময়ে সালাত আদায় করতে এবং মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করেছেন। সূর্যোদয়ের সময় যতক্ষণ না সূর্য উপরে উঠবে, সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় যতক্ষণ না অস্ত যাবে এবং সূর্য পশ্চিমাকাশে চলে পড়ার সময় যতক্ষণ না ঢলে পড়ে ।' (মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক : ৬৫৬৯)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url