আল্লাহ তায়ালার পরিচয় (পর্ব-০২) I Allah Talar porichoy (Parbo-02)

আল্লাহ তায়ালার পরিচয়

আল্লাহ তায়ালা হলেন সমস্তকিছুর সৃষ্টিকারী ও নির্বাহক। আল্লাহ তায়ালা বিশ্বের সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞ। তিনি আমাদের সমস্ত কাজ দেখেন ও আমাদের সমস্ত অনুগতি জানেন। আল্লাহ তায়ালা নিত্য পরিচয়যুক্ত এবং সমস্ত দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞ। আল্লাহ তায়ালা সবকিছুকে দেখেন, জানেন এবং সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করেন। আল্লাহ তায়ালা সমস্ত ভালোবাসা ও করুণা প্রদান করেন এবং সমস্ত দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য নির্দিষ্ট নীতি নির্ধারণ করেন। ইসলামে আল্লাহ তায়ালা নিরাপদ, পবিত্র এবং অমুখাপেক্ষী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। মুসলিম বিশ্বাস করেন যে আল্লাহ তায়ালা সবকিছু জানেন এবং সকল বিষয়ে তিনি সর্বশক্তিমান। তিনি জগতের সকল জীবজনের সৃষ্টিকর্তা, সংরক্ষণকর্তা এবং নির্দেশক। তিনি যথাযথ ন্যায্য এবং সকল জীবজনের উন্নয়নের জন্য নিয়ম বস্তু এবং মানসিক বুদ্ধিমত্তা প্রদান করেন।

আল্লাহ তায়ালার পরিচয় (পর্ব-০২)

আল্লাহ তায়ালার পরিচয়

কোরআন ও হাদীতে বর্ণীত আল্লাহ তায়ালার পরিচয় নিম্নে প্রদান করা হলোঃ- 1. পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা নিজেকে জ্যোতির সাথে তুলনা করে বলেছেন- 2. ‘আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর জ্যোতি, তাঁর জ্যোতির উপমা যেন একটি দীপাধার যার মধ্যে আছে এক প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাচের আবরণের মধ্যে স্থাপিত, কাচের আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্রসদৃশ; এটা প্রজ্বলিত করা হয় 3. পূত-পবিত্র যায়তুন বৃক্ষের তৈল দ্বারা যা প্রাচ্যের নয়, প্রতীচ্যেরও নয়, অগ্নি ওকে স্পর্শ না করলেও যেন ওর তৈল উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে; জ্যোতির উপর জ্যোতি! আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথনির্দেশ করেন তাঁর জ্যোতির দিকে। আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।' (নূর, ২৪ : ৩৫) 4. ‘আল্লাহ নূর’ এ সম্পর্কে হযরত আবু যার গা থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে— তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আপনার প্রতিপালককে প্রত্যক্ষভাবে দেখেছেন? প্রত্যুত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জবাব দিলেন- 5. ‘(তিনি তো) নূর, তা আমি কি রূপে দেখবো?' (মুসলিম : ২৬১) নবী-রাসূলগণের মিশনই ছিল উম্মতকে আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্কিত করা এবং তাঁর হিদায়াতের পথ বাতলে দেওয়া। তাই আল্লাহ তায়ালার পরিচয় নবী-রাসূলদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা থেকেও খুঁজে পাওয়া যায়। হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লাম)= নিজ সৃষ্ট মূর্তির মধ্যে সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে না পেয়ে তারকা, চন্দ্র ও সূর্যের মধ্যে তাঁকে খোঁজেন। অবশেষে তিনি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার সন্ধান লাভ করেন । কুরআনুল কারীমের ভাষায়- 6. স্মরণ কর, ইবরাহীম (আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লাম) তার পিতা আযরকে বলেছিল, আপনি কি মূর্তিকে ইলাহরূপে গ্রহণ করেন? আমি তো আপনাকে ও আপনার সম্প্রদায়কে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখছি। 7. এই ভাবে আমি ইবরাহীমকে (আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লাম) আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর পরিচালন-ব্যবস্থা দেখাই, যাতে সে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। 8. অতঃপর রাতের অন্ধকার যখন তাকে আচ্ছন্ন করল তখন সে নক্ষত্র দেখে বললো, এই আমার প্রতিপালক। অতঃপর যখন তা অস্তমিত হলো তখন সে বললো যা অস্তমিত হয় তা আমি পছন্দ করি না। 9. অতঃপর যখন সে চন্দ্রকে সমুজ্জ্বলরূপে উদিত হতে দেখল তখন বললো, এই-ই আমার প্রতিপালক। যখন তাও অস্তমিত হলো তখন বললো, আমাকে আমার প্রতিপালক সৎপথ প্রদর্শন না করলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হবো । 10. অতঃপর যখন সে সূর্যকে প্রদীপ্তমানরূপে উদিত হতে দেখল তখন বললো, এই-ই আমার প্রতিপালক, এটি সর্ববৃহৎ। যখন তাও অস্তমিত হলো, তখন সে বললো, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যাকে আল্লাহর শরিক করো তার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্রব নেই । 11. আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়েছি যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।' (আনআম, ৬ : ৭৪- ৭৯) 12. এরপর হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লাম)মূর্তিপূজকদেরকে আল্লাহ তায়ালার পরিচয় প্রদান করেন । আল কুরআনের ভাষায়- 13. ‘যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাকে পথ প্রদর্শন করেন। তিনিই আমাকে দান করেন আহার্য ও পানীয় এবং রোগাক্রান্ত হলে তিনি আমাকে রোগমুক্ত করেন এবং তিনিই আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনর্জীবিত করবেন এবং আশা করি, কিয়ামতের দিন আমার অপরাধ মার্জনা করবেন।' (শুআরা, ২৬ : ৭৮-৮২) 14. নিজেকে প্রভু বলে দাবীদার পৃথিবীর দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শাসক নমরূদের সাথে হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লাম)এর আল্লাহ তায়ালার পরিচয় সম্পর্কিত কথোপকথন কুরআনুল কারীমে বর্ণনা করা হয়েছে- 15. ‘তুমি কি ঐ ব্যক্তিকে দেখনি, যে ইবরাহীমের (আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লাম)সঙ্গে তার প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল, যেহেতু আল্লাহ তাকে কর্তৃত্ব দিয়েছেন ৷ 16. যখন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লাম) বললো, তিনি আমার প্রতিপালক যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান, সে বললো, আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই ৷ 17. ইবরাহীম (আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লাম) বললো, আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিক হতে উদিত করান, তুমি তাকে পশ্চিম দিক হতে উদিত করাও তো । 18. অতঃপর যে কুফরি করেছিল সে হতবুদ্ধি হয়ে গেল। আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।' (বাকারা, ২ : ২৫৮) 19. পৃথিবীর ইতিহাসে আরো এক প্রভু দাবীদারের নাম ফেরাউন। আল্লাহ তায়ালা এই যালিমের বিরুদ্ধে 20. হযরত মুসা ((আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লাম)) কে পাঠালেন। 21. আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘ফিরআউনের নিকট যাও, সে তো সীমালংঘন করেছে।' (তহা, ২০ : ২৪) আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে হযরত মুসা ফিরআউনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ফেরাউন মুসা (আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লাম) 22. কে সরাসরি প্রশ্ন করে- ‘ফেরাউন বললো, হে মূসা (আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লাম)! কে তোমার প্রতিপালক? (তহা, ২০ : ৪৯) ফেরাউনের প্রশ্নের জবাবে হযরত মুসা (আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লাম)আল্লাহ তায়ালার যে পরিচয় পেশ করেছিলেন তা কুরআনুল কারীমে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে—‘মূসা বললো, আমাদের প্রতিপালক তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথনির্দেশ করেছেন । 23. ফেরাউন বললো, তা হলে অতীত যুগের লোকদের অবস্থা কী? 24. মূসা (আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লাম)বললো, ‘এর জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকট কিতাবে রয়েছে, আমার প্রতিপালক ভুল করেন না এবং বিস্মৃতও হন না। যিনি তোমাদের 25. জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে করে দিয়েছেন তোমাদের চলার পথ, তিনি আকাশ হতে বারিবর্ষণ করেন । 26. এবং আমি তা দ্বারা বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ উৎপন্ন করি। তোমরা আহার করো ও তোমাদের গবাদিপশু চরাও; অবশ্যই এতে নিদর্শন আছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য।' (তহা, ২০ : ৫০-৫৪) 27. এভাবে পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন নবী তাঁর সম্প্রদায়কে কিভাবে আল্লাহর পরিচয় দান করেছেন তার বিশদ বর্ণনা রয়েছে । 28. আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা ও সম্মান দান করেন আবার যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা ও সম্মান কেড়ে নেন । 29. ‘বল, হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান করো এবং যার নিকট হতে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নাও; যাকে ইচ্ছা তুমি ইজ্জত দান করো, আর যাকে ইচ্ছা তুমি হীন করো। কল্যাণ তোমার হাতেই। নিশ্চয়ই তুমি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান । 30. তুমি রাত্রিকে দিবসে পরিণত এবং দিবসকে রাত্রিতে পরিণত করো : তুমিই মৃত হতে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটাও, আবার জীবন্ত হতে মৃতের আবির্ভাব ঘটাও । 31. তুমি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান কর।' (আলে ইমরান, ৩ : ২৬-২৭) 32. পৃথিবীর যাবতীয় কর্তৃত্ব আল্লাহ তায়ালার। বিচারের ক্ষেত্রে তিনিই শ্রেষ্ঠ, তাঁর ফায়সালাই সর্বোত্তম । পবিত্র কুরআনুল কারীমে তিনি বলেন- 33. ‘কর্তৃত্ব তো আল্লাহরই; তিনি সত্য বিবৃত করেন এবং ফয়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ।' (আনআম, ৬ : ৫৭) 34. বিশ্বজগতের নিখুঁত সৃষ্টির দিকে তাকালে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার পরিচয় পাওয়া যায় । কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেন- 35. ‘মহামহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর করায়ত্ত; তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। 36. যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য- কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। 37. যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সপ্তাকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত দেখতে পাবে না; তুমি আবার তাকিয়ে দেখ, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি? 38. অতঃপর তুমি বারবার দৃষ্টি ফিরাও, সেই দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।' (মুলক, ৬৭ : ১-৪) 39. মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআনের সূরা নাহলে আল্লাহ তায়ালা নিজেই তাঁর পরিচয় পেশ করেছেন এভাবে- 40. ‘তিনিই আকাশ হতে বারিবর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মায় উদ্ভিদ যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাক। তিনি তোমাদের জন্য তা দ্বারা জন্মান শস্য, যায়তুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর এবং সর্বপ্রকার ফল। অবশ্যই তাতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন । 41. তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য ও চন্দ্রকে; আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই নির্দেশে। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন- 42. তিনি বিবিধ প্রকার বস্তু যা তোমাদের জন্য পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন, এতে রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন সেই সম্প্রদায়ের জন্য যারা উপদেশ গ্রহণ করে । তিনিই সমুদ্রকে অধীন করেছেন, যাতে তোমরা তা হতে তাজা মৎস্য আহার করতে পার এবং যাতে তা হতে আহরণ করতে পার রত্নরাজি, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান করো এবং তোমরা দেখতে পাও, তার বুক চিরে নৌযান চলাচল করে এবং তা এই জন্য যে, তোমরা যেন তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর । 43. তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয় এবং স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার। এবং পথনির্ণায়ক চিহ্নসমূহও আর তারা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায় । 44. সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন তিনি কি তারই মত যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না? তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। আল্লাহ তো অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।' (নাহল, ১৬ : ১০-১৮) 45. আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি অনুপম, সুন্দর ও বৈচিত্র্যময়। তিনি প্রত্যেক প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায় যাতে তারা বংশবিস্তার করতে পারে। কুরআনুল কারীমের ভাষায়- 46. ‘পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি উদ্ভিদ ও মানুষ এবং তারা যাদেরকে জানে না তাদের প্রত্যেককে সৃষ্টি করেছেন জোড়া জোড়া করে। তাদের জন্য এক নিদর্শন রাত্রি, তা হতে আমি দিবালোককে অপসারিত করি, তখন তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, তা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ এবং চন্দ্রের জন্য আমি নির্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন মনযিল; অবশেষে তা শুষ্ক বক্র, পুরাতন খর্জুর শাখার আকার ধারণ করে। সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রের নাগাল পাওয়া এবং রজনীর পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা; এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করে।' (ইয়াসীন, ৩৬ : 36-40 ) 47. মানুষের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহ তায়ালার পরিচয় কুরআনুল কারীমে তুলে ধরা হয়েছে এভাবে- 48. 'বল, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তঃকরণ। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। বল, তিনিই পৃথিবীতে তোমাদের ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হবে।' (মুলক, ৬৭ : ২৩-২৪ ) 49. আল্লাহ তায়ালা এতই ক্ষমতাধর যে, তিনি যদি কোনো কিছু করতে চান তাহলে নির্দেশ দেওয়ামাত্রই তা হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন- 50. ‘তাঁর ব্যাপার শুধু এই, তিনি যখন কোনো কিছুর ইচ্ছা করেন, তিনি তাকে বলেন, হও, ফলে তা হয়ে যায়।' (ইয়াসীন, ৩৬ : ৮২) 51. আল্লাহর পরিচয় এতই ব্যাপক যে, এই পৃথিবীর সমস্ত গাছ দিয়ে কলম বানিয়ে ও সমুদ্রের জলরাশিকে কালি হিসেবে চালালেও আল্লাহ তায়ালার পরিচয় ও মহত্ত্বের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন- 52. ‘বল, আমার প্রতিপালকের কালেমা লিপিবদ্ধ করার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়, তবে আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হবার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে— আমরা এর সাহায্যার্থে এর অনুরূপ আরও সমুদ্র আনলেও। বল, আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমার ইলাহ একমাত্র ইলাহ। সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।' (কাহাফ, ১৮ : ১০৯-১১০) 53. কারা আল্লাহ তায়ালার পরিচয় সম্পর্কে অবগত হতে পারবে? কী তাদের গুণাবলি? সে সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেন- 54. 'আসমান ও যমীনের সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই; আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলি রয়েছে বোধশক্তিসম্পন্ন লোকের জন্য। 55. যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে ও বলে হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এগুলো নিরর্থক সৃষ্টি করনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদেরকে দোজখের শাস্তি হতে রক্ষা কর । 56. হে আমাদের প্রতিপালক! কাউকে তুমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করলে তাকে তো তুমি নিশ্চয়ই লাঞ্ছিত করলে এবং যালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই । হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা এক আহ্বায়ককে ঈমানের দিকে আহ্বান করতে শুনেছি ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আন' সুতরাং আমরা ঈমান এনেছি। 57. হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের পাপ ক্ষমা কর, আমাদের মন্দ কাজগুলি দূরীভূত করো এবং আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের সহগামী করে মৃত্যু দিও 58. 'হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি রাসূলগণের মাধ্যমে আমাদেরকে যা দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছ তা আমাদেরকে দাও এবং কিয়ামতের দিন আমাদেরকে হেয় করো না। নিশ্চয়ই তুমি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করো না।' (আলে ইমরান, ৩ : ১৮৯-১৯৪) 59. আল্লাহ তায়ালা নেক বান্দাদের উপর্যুক্ত প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে পরবর্তী আয়াতেই বলেন— 60. অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বলেন, আমি তোমাদের মধ্যে কর্মনিষ্ঠ কোনো নর অথবা নারীর কর্ম বিফল করি না। তোমরা একে অপরের অংশ। সুতরাং যারা হিজরত করেছে, নিজ গৃহ হতে উৎখাত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে আমি তাদের পাপ কাজগুলি অবশ্যই দূরীভূত করব এবং অবশ্যই তাদেরকে দাখিল করব জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। এটিই আল্লাহর নিকট হতে পুরস্কার; উত্তম পুরস্কার আল্লাহরই নিকট।' (আলে ইমরান, ৩ : ১৯৫)

পরিশেষে

উপর্যুক্ত আলোচনার সার নির্যাস হলো: ক. আল্লাহ তায়ালা সত্তাগতভাবে এক বা একক। খ. তিনিই যাবতীয় কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক, মনিব ও সার্বভৌমত্বের অধিকারি । গ. তিনিই যাবতীয় ইবাদত, আনুগত্য ও পূজা-অর্চনার একক ও লা-শরীক হকদার। ঘ. তিনিই যাবতীয় গুণবাচক নাম ও গুণের একমাত্র অধিকারি। ঙ. তাঁর অধিকারভুক্ত কোনো কিছুতে কাউকে শরিক করা জঘন্য অপরাধ । এগুলোর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনসহ জীবনের সর্বক্ষেত্রে তা মেনে চলাই হলো সত্যিকার ও নির্ভেজাল ঈমানের পরিচয়। আর সত্যিকার ও নির্ভেজাল ঈমান ছাড়া আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভ করা যাবে না।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url