মানুষ ও ঈমানের পরিচয়

মানুষ ও ঈমানের পরিচয়

ইসলাম একটি ধর্ম যা মানুষের জীবনের সমস্যার সমাধান এবং দৈনন্দিন জীবনে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়। মানুষ হলো আল্লাহর সৃষ্টির সর্বোচ্চ মহত্ত্বশালী সৃষ্টি এবং প্রতিটি মানুষকে আল্লাহর বাধ্যতামূলক আদেশগুলি অনুসরণ করতে হয়। আল্লাহ মানুষকে আত্মনির্ভর ও বিচরণ সম্পর্কে শিক্ষা দেয় এবং মানুষ একজন ভালো মুসলিম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে কেবল আল্লাহর পথে চলে। ইসলামে মানুষকে খুবই মৌলিক প্রাচীন অন্তর্জাতিক সংস্কৃতি দিয়ে পরিপূর্ণ দেখা হয়। ইসলাম বলে যে, সমস্ত মানুষই সমান এবং সমস্ত মানুষকে সমানভাবে বিচার করা উচিত। ইসলামে মানুষের দায়িত্ব হল আল্লাহর পরিপূর্ণ বান্দা হিসেবে জীবন কাটানো। আর ঈমান হল একটি বৈশিষ্ট্য যা একজন মুসলিম হওয়ার জন্য প্রয়োজন। ইসলামে ঈমান হল বিশ্বাস যে আল্লাহ এক, তিনি পরম করুণাময় এবং সকল কিছুই তার হাতে নিহিত।

মানুষ ও ঈমানের পরিচয়

মানুষের পরিচয়

আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হচ্ছে মানুষ। মানুষ সৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার একটি মহত্ত্বপূর্ণ কাজ। সৃষ্টির অপার বিস্ময় হচ্ছে মানুষ। কতগুলো উদ্দেশ্যে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। মানব সৃষ্টির ইতিহাসে দেখা যায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষকে দুনিয়ায় তাঁর খলিফার মহান দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বললেন, নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে খলিফা সৃষ্টি করতেছি।' (বাকারা, ২ : ৩০) মানুষকে খলিফা হিসাবে সৃষ্টি করার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘দুনিয়া অবশ্যই মিষ্টি মধুর ও আকর্ষণীয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে দুনিয়ায় খলিফা বানিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি দেখতে চান তোমরা কেমন কাজ করো। অতএব তোমরা দুনিয়াকে ভয় করো।' (মুসলিম : ৪৯২৫, তিরমিযি : ২১১৭) আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের উদ্দেশ্যে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে কেবলমাত্র এই জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।' (যারিয়াত, ৫১ : ৫৬) মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে মৃত্তিকার উপাদান হতে। অতঃপর শুক্রবিন্দুতে পরিণত করে তা হতে পর্যায়ক্রমে অনন্য এক সৃষ্টিতে রূপান্তর করে আল্লাহ তায়ালা তৈরি করেছেন মানুষ। এ প্রসঙ্গে তিনি কুরআনুল কারীমে বলেন- ‘আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান হতে। অতঃপর আমি একে শুক্রবিন্দুরূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে। পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি আলাকে, অতঃপর আলাককে পরিণত করি পিণ্ডে এবং পিণ্ডকে পরিণত করি অস্থি-পিঞ্জরে, অতঃপর অস্থি-পিঞ্জর ঢেকে দেই গোশত দ্বারা, অবশেষে একে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে। অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান। এরপর তোমরা অবশ্যই মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর কিয়ামতের দিন অবশ্যই তোমাদেরকে উত্থিত করা হবে।' (মুমিনূন, ২৩ : ১২-১৬) আল্লাহ তায়ালা মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদানের মাধ্যমে দুনিয়ার সকল সৃষ্টিকে মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন। জলে, স্থলে, আকাশে চলাচল করার বাহনও দিয়েছেন। তিনি পবিত্র কুরআনে বলেন- 'আমি তো আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর ওদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। (বনী ইসরাঈল, ১৭ : 90 ) আল্লাহপ্রদত্ত শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার জন্য আবার তিনি পথও বলে দিয়েছেন। আমরা সদা-সর্বদা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করবো তাঁর রাসূল এর প্রদর্শিত পথে চলব, তাহলেই কেবল আমরা সফলকাম হতে পারব ।

ঈমানের পরিচয়

>ঈমান শব্দটি আরবী, শব্দটি আমনুন মূল ধাতু থেকে নির্গত। অর্থ বিশ্বাস করা, আস্থা স্থাপন, স্বীকৃতি দেওয়া, নির্ভর করা, মেনে নেওয়া ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায়, শরীয়তের যাবতীয় বিধি-বিধান অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং তদনুযায়ী আমল করাকে ঈমান বলে । ঈমানের পরিচয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘ঈমান হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা, তাঁর ফেরেশতাকুল, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ, পরকাল ও ভাগ্যের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।' (মুসলিম : ০৯, আবু দাউদ : ৪০৭৫) প্রকৃতপক্ষে, ইসলামের মূল বিষয়গুলোর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসকেই বলা হয় ঈমান। ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলো আল্লাহ তায়ালার বাণী আল-কুরআন ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পবিত্র হাদীসে বিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘কিন্তু সাওয়াব আছে কেউ আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, সমস্ত কিতাব এবং নবীগণের উপর ঈমান আনয়নে।' (বাকারা, ২ : ১৭৭) আল্লাহ তায়ালা ঈমান আনয়নের সম্পর্কে আরো বলেন- ‘যারা আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য পুরস্কার আছে তাদের প্রতিপালকের নিকট। তাদের কোনো ভয় নাই এবং তারা চিন্তিত হবে না।' (বাকারা, ২ : ৬২) উপর্যুক্ত কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি সুদৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস ছাড়া ঈমানদার হওয়া যায় না। যিনি এগুলোতে পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করেন, তাকে বলা হয় মুমিন। মুমিন ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রিয়পাত্র। আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরকে ভালোবাসেন। আখেরাতে তিনি মুমিনদের চিরশান্তির জান্নাত দান করবেন। মুমিনগণ সেখানে চিরকাল থাকবে। জান্নাতের সকল নিয়ামত ভোগ করবে। ঈমান আনয়নের প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদেরকে সুসংবাদ দাও, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার নিম্নদেশে রয়েছে প্রবাহিত ঝর্নাধারা।' (বাকারা, ২ : ২৫) “নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে, সৎকর্ম করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের নিকট আছে।' (বাকারা, ২ : 277) ঈমান আল্লাহ তায়ালার একটি বড় নিয়ামত। ঈমানের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ লাভ করতে পারে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি যার সামান্যতম ঈমান থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসা হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘জান্নাতীগণ জান্নাতে এবং জাহান্নামীগণ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা বলবেন, যার অন্তরে একটি সরিষা পরিমাণও ঈমান রয়েছে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আস। তারপর তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নেওয়া হবে।' (বুখারী : ২১) আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল, ফেরেশতা এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হবে তাগুত, কুফর, শিরক, বিদয়াত, নিফাক প্রভৃতি নাফরমানিমূলক বিষয়গুলোকে অস্বীকার করে, পিছনে ঠেলে দিয়ে, ত্যাগ করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যে তাগুতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহর উপর ঈমান আনবে সে এমন মজবুত হাতল ধরবে যা কখনো ভাংবে না।' (বাকারা, ২ : 256 ) যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনে আল্লাহ তায়ালা তাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। কুরআনুল কারীমের ভাষায়— ‘যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের অভিভাবক, তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান। আর যারা কুফরি করে তাগুত তাদের অভিভাবক। তারা তাদেরকে আলো হতে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই দোযখের অধিবাসী, সেখানেই তারা চিরকাল থাকবে।' (বাকারা, ২ : ২৫৭) ঈমানের অনেকগুলো শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তার প্রত্যেকটিই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিভিন্ন হাদীসে আলোচনা করেছেন। তেমনিই একটি হাদীস- ‘ঈমানের সত্তরটি কিংবা ষাটটিরও বেশি শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম শাখা হচ্ছে লা ইলাহা ইল্লালাহ্ বলা আর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা এবং লজ্জা হলো ঈমানের একটি শাখা।' (মুসলিম : ৫১)

পরিশেষে

উপরে বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি আমরা ঈমান আনবো ও প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জানব এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করব। বাস্তব জীবনে এগুলোর অনুসরণ করে জীবন গড়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালারর সন্তুষ্টি অর্জন করব । আল্লাহপ্রদত্ত শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার জন্য আবার তিনি পথও বলে দিয়েছেন। আমরা সদা-সর্বদা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করবো তাঁর রাসূল এর প্রদর্শিত পথে চলব, তাহলেই কেবল আমরা সফলকাম হতে পারব

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url