ইসলামী দৃষ্টিকোণে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ

ইসলামী দৃষ্টিকোণে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ

ইসলাম ধর্মে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিশেষ গুরুত্ব রাখা হয়। এটি মুসলিম সমাজে প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়। কোরআন ও হাদিসে আল্লাহ পাক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কথা বলেছেন। ইসলামে শিক্ষা মুসলিম সমাজের বেসিক প্রথম আসর হিসাবে বিবেচিত হয়। প্রথম আসরে জাহিলীয় সমাজে জ্ঞানের অভাব থেকে মুসলিমদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ প্রথম প্রয়াসগুলোর মধ্যে একটি ছিল। কোরআনে আল্লাহ পাক বলেন, "উঠো যাও, শিক্ষা গ্রহণ করো এবং জ্ঞান প্রবর্তন করো।" (আল-জুমুআহ ৬২:২) এছাড়াও কুরআনে একটি আয়াত বলে, "যে কেউ যার উপর ইসলামের পথে থাকে সে জ্ঞানের পথে সমস্যাহীন থাকে।" (আল-বাকারাহ ২:২৮০)
ইসলামী দৃষ্টিকোণে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ

ইসলামী শিক্ষার ভূমিকা

শিক্ষা শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত 'সাস' ধাতু থেকে। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ Education । সাধারণত মানুষের আচরণের কাঙ্ক্ষিত, বাঞ্ছিত এবং ইতিবাচক পরিবর্তনই হলো শিক্ষা । প্রশিক্ষণ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Training । পরিভাষায়: কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত জনশক্তিকে দক্ষতার সাথে কার্য সম্পাদনের জন্য যোগ্যতা ও জ্ঞান বৃদ্ধির মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে অব্যাহত যে প্রচেষ্টা তাকেই প্রশিক্ষণ বলে । শিক্ষাই সবকিছুর ভিত্তিমূল। শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের আলোকেই মানুষ ন্যায়-অন্যায় ও ভালো-মন্দের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে। জ্ঞান তথা শিক্ষার উপর ভিত্তি করেই রচিত হয় জাতিসত্তা। কোনো জাতির ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে শিক্ষা। জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ, আদর্শের ভিত্তিতে চরিত্র গঠন, জীবনের সকল ক্ষেত্রে ও বিভাগে নেতৃত্বদানের উপযোগী ব্যক্তিত্ব তৈরি করা কেবলমাত্র উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমেই সম্ভব। জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রধান উপকরণও শিক্ষা।

ইসলামী প্রশিক্ষণ জরুরি

ইসলামী জীবন দর্শনের উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বিষয়টি। কুরআন-সুন্নার দৃষ্টিতে প্রশিক্ষণের বিষয়টি নিম্নে উপস্থাপন করা হলো । সৃষ্টির পরই আদম (আঃ) কে শিক্ষা দান আল্লাহ তায়ালা প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টির পরপরই সমস্ত বস্তুর নাম শিক্ষা দিয়েছেন এবং শিক্ষিত ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদা প্রমাণে আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন, তারপর সে সমুদয় ফেরেশতাদের সম্মুখে প্রকাশ করলেন এবং বললেন এই সমুদয়ের নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। তারা বললো, আপনি মহান, পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের তো কোনো জ্ঞান নেই। বস্তুত আপনি জ্ঞানময় ও প্রজ্ঞাময়। তিনি বললেন, হে আদম! তাদেরকে এ সকল নাম বলে দাও। সে তাদেরকে এ সকলের নাম বলে দিলো।' (বাকারা, ২ : ৩১-৩৪ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে প্রেরণ করা হয়েছে প্রশিক্ষক হিসেবে আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর কাছে তাদের হেদায়াতের জন্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। হেদায়াতের প্রধান মাধ্যমই হলো শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান। আর নবী-রাসূলদের দায়িত্বই ছিল তাঁদের উম্মতকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা। তেমনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপরও ছিল সে মহান দায়িত্ব । আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন-'আমি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের নিকট একজন রাসূল পাঠিয়েছি, যে তোমাদের নিকট আমার আয়াত তিলাওয়াত করে, তোমাদের পরিশুদ্ধ করে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় এবং এমন সব কথা তোমাদের শেখায়, যা তোমরা জানতে না। (বাকারা, ২ : ১৫১) তিনি আরো বলেন-“তিনিই মহান সত্তা যিনি উম্মীদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন, যে তাদেরকে তাঁর আয়াত পাঠ করে শুনায়, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়।' (জুমুয়া, ৬২ : 2) যিনি শিক্ষা প্রদান করেন তিনিই শিক্ষক। তেমনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর উম্মতের শিক্ষক । তাইতো তিনি তাঁর নিজের বিষয়ে বলেছেন- ‘আর আমি তো শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।' (ইবনে মাজাহ : ২২৫) কাবা ঘর নির্মাণের সময় মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ তায়ালার কাছে তাঁদের উম্মতকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে উম্মতের মধ্য হতেই একজন রাসূল প্রেরণের জন্য দোয়া করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে উম্মতের জীবন পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে প্রেরণ করেছেন। কুরআনুল কারীমের ভাষায় সে দোয়া- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের মধ্য হতে তাদের জন্য একজন রাসূল প্রেরণ করিও যে তোমার আয়াতসমূহ তাদের নিকট তিলাওয়াত করবে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে এবং তাদের পরিশুদ্ধ করবে।' (বাকারা, ২ : ১২৯ )

শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

শিক্ষিত বা প্রশিক্ষিত ব্যক্তি ও শিক্ষাবিহীন ব্যক্তি এক নয়। যার মধ্যে শিক্ষার আলো আছে তার প্রতিটি পদক্ষেপ হয় চিন্তা-ভাবনার সাথে আর বিপরীতে যার মধ্যে শিক্ষার আলো নেই তার জীবনাচরণ হয় অনিয়মতান্ত্রিক, কাজ করে নির্বোধের মত। আল্লাহ তায়ালা বলেন- 'বলো, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি পরস্পর সমান হতে পারে? কেবল বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে।' (যুমার, ৩৯ : ৯) আল্লাহ তায়ালা এ পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, যা কিছু প্রেরণ করেছেন তার সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করার মাধ্যমেই সে সব বিষয়ের বিশালতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভবপর হয়। আর এই শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমেই একজন মানব সন্তান আলোর দিশা খুঁজে পায়। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে—‘তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যে ব্যক্তি সত্য বলে জানে আর যে অন্ধ তারা কি সমান? উপদেশ গ্রহণ করে শুধু বিবেকসম্পন্নগণই।' (রাদ, ১৩ : ১৯) একজন মানব সন্তান আদর্শ শিক্ষা কিংবা কর্মোপযোগী শিক্ষা গ্রহণ করে তা বিতরণের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার পরেও অনন্তকাল তার সাওয়াব বা কর্মফল ভোগ করতে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন-*যখন মানুষ মারা যায় তখন তার সকল আমল বা কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল বা কাজ বন্ধ হয় না তা হলো সাদাকায়ে জারিয়া, এমন শিক্ষা যার দ্বারা অন্যরা উপকৃত হতে থাকে এবং এমন সুসন্তান যে তার পিতা-মাতার জন্য দোয়া করে।' (মুসলিম : ৩০৮৪, আবু দাউদ : ২৪৯৪)

শিক্ষা গ্রহণকারীর মর্যাদা

জ্ঞান অন্বেষণের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণকারী ব্যক্তি অর্জিত শিক্ষার মাধ্যমে সফলতার পথ খুঁজে পায় এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা তার জন্য অনেক সহজ হয়ে যায়। এর মাধ্যমে তার জান্নাতের পথপ্রাপ্তিও সুগম হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জ্ঞান অন্বেষণকারী সম্পর্কে বলেন— 'যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণে পথ চলে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।' (মুসলিম : ৪৮৬৭, ইবনে মাজাহ : ২২১)

শিক্ষা প্রদানকারীর মর্যাদা

যিনি শিক্ষা দিয়ে থাকেন তিনিই শিক্ষক। এই শিক্ষা বিতরণকারী শিক্ষকের মর্যাদা অনেক। শিক্ষা বা জ্ঞান প্রদানকারী ব্যক্তির জন্য আসমান জমিনের সকলে আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রদানকারী ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন- শিক্ষা ‘স্বয়ং আল্লাহ, ফেরেশতাগণ ও আসমান জমিনের অধিবাসীরা এমনকি ভূগর্ভস্থ পিপীলিকা ও মৎস্য পর্যন্ত সেই ব্যক্তির জন্য দোয়া করে, যে লোককে কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষা দিয়ে থাকে।' (তিরমিযি : ২৬০৯) কুরআন শিক্ষা গ্রহণকারী ও শিক্ষা প্রদানকারী সর্বোত্তম ব্যক্তি আখ্যায়িত করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেন-‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে নিজে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শিখায়।' (বুখারী : ৪৬৩৯, আবু দাউদ : ১২৪০ )

শিক্ষা গ্রহণের শর্ত শিক্ষা প্রদান করা

জ্ঞান অর্জন করে সে জ্ঞান নিজের মধ্যে রেখে দিলেই হবে না তা অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার উম্মতকে উদ্দেশ করে বলেন— ‘আমার নিকট হতে একটি আয়াত হলেও তা অন্যের নিকট পৌঁছিয়ে দাও।' (বুখারী : ৩২০২, তিরমিযি : ২৫৯৩) তিনি ফারায়েয ও কুরআন শিক্ষা গ্রহণ এবং তা অপরকে প্রদান করার তাগিদ দিয়ে বলেন- ‘তোমরা ফারায়েজ ও কুরআন শিক্ষা কর এবং মানুষকে তা শিক্ষা দাও ৷ কেননা আমাকে অতিসত্বরই উঠিয়ে নেওয়া হবে।' (তিরমিযি : ২০১৭)জ্ঞান অর্জন করে তা অপরের নিকট বিতরণ না করা খিয়ানতের শামিল যা সম্পদ খিয়ানতের চেয়েও বেশি দূষণীয় উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ বলেন- ‘ইলম শিক্ষাদানে দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তোমরা পরস্পরে উপদেশ দিবে। কেননা সম্পদের খিয়ানতের তুলনায় ইলমের খিয়ানত মারাত্মক দূষণীয় বিষয়। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করবেন।' (মুজামুল কবির লিবারানি : ১১৫৩৬)

শিক্ষার জ্ঞান আদান প্রদানে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়

শিক্ষার জ্ঞান আদান প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন হয়। আল্লাহ তায়ালা তার জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। শিক্ষার জ্ঞান আদান প্রদানের মজলিসে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রশান্তি বর্ষিত হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান হাসিল করার উদ্দেশ্যে পথ চলবে, আল্লাহ তার জন্য বেহেশতের পথ সুগম করে দিবেন। আর যখন কোনো একদল লোক আল্লাহর ঘরে একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং তার উপর শিক্ষামূলক আলাপ-আলোচনা করে, তখন তাদের উপর (আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে) এক মহা প্রশান্তি অবতীর্ণ হয় এবং আল্লাহর রহমত তাদেরকে আবৃত করে রাখে। আর ফেরেশতারা তাদের মজলিসকে ঘিরে রাখে এবং স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফেরেশতাদের মজলিশে তাদের সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করেন।' (মুসলিম : ৪৮৬৭)

প্রকৃত শিক্ষা কেবল জ্ঞান বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরাই লাভ করে

দীনি শিক্ষা বা প্রকৃত শিক্ষা সবাই অর্জন করতে পারে না। যে অর্জন করতে পারে সেই সফলকাম হতে পারে, সেই বিরাট সম্পদ অর্জন করতে পারে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘তিনি যাকে চান, হিকমত দান করেন। আর যে ব্যক্তি হিকমত লাভ করে সে আসলে বিরাট সম্পদ লাভ করেছে। এই কথা থেকে কেবলমাত্র তারাই শিক্ষা লাভ করে যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী। (বাকারা, ২ : ২৬৯)

সার সংক্ষেপ

বাস্তব জীবনে চলার জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। জীবনের চলার পথে সকল ধাপেই শিক্ষার প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে ভূমিকা পালনের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অতুলনীয় ।

Next Post Previous Post
1 Comments
  • Maruf
    Maruf ১ মে, ২০২৩ এ ১২:১৭ PM

    Nice

Add Comment
comment url