মুমিন ব্যাক্তির পার্থিব জীবন

মুমিন ব্যাক্তির পার্থিব জীবন

মুমিন ব্যাক্তির পার্থিব জীবন হল তার মুসলিম হওয়ার পরেও সমস্ত জীবনে আল্লাহর প্রসঙ্গে পরিমাণ রাখা এবং শান্তি, সন্তুষ্টি এবং সম্মান এর সাথে জীবন যাপন করা। একজন মুমিন ব্যক্তি বাস্তব জীবনে তার আল্লাহর প্রতি আবদ্ধতা এবং তার নির্দিষ্ট ধর্মীয় প্রথাগুলি অনুসরণ করে। একজন মুমিন ব্যক্তির জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য হল আল্লাহর প্রসঙ্গে নিরন্তর সমর্পণ এবং সেই সমর্পণ থেকে প্রাপ্ত হওয়া সন্তুষ্টি ও শান্তি। একজন মুমিন ব্যক্তি দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর কথা অধিক শুনতে এবং তার ইসলামিক শিক্ষা অনুসরণ করতে হয়। সে প্রতিদিন ফজর নামাজ পড়তে এবং ইসলামিক দিকনির্দেশনা অনুসরণ করতে হয়। তাকওয়া ও তাওবা: মুমিন হতে হলে তাকওয়া ও তাওবা করা জরুরি। এর মাধ্যমে তিনি আল্লাহর পথে থাকতে পারেন এবং বিভিন্ন দুষ্কৃতি থেকে দূরে থাকতে পারেন। ইসলামিক শিক্ষা ও জ্ঞান: মুমিন ব্যক্তির জীবনে ইসলামিক শিক্ষা এবং জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ইসলামের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত এবং সুন্নত সম্পর্কে জানতে হবে।
মুমিন ব্যাক্তির পার্থিব জীবন

মুমিন ব্যাক্তির পার্থিব জীবন

মুমিন ব্যক্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকট সবচাইতে প্রিয় । পার্থিব জীবনে তিনি তাঁর এই প্রিয় বান্দাদের রোগ-শোক, ভয়-ক্ষুধা, ধন-সম্পদের কমতি, ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি প্রভৃতির মাধ্যমে পরীক্ষা করেন, মহান সৃষ্টিকর্তার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব্যক্তিই কেবল সফলতা অর্জন করতে পারে। প্রতিপালকের পরীক্ষায় অবতীর্ণ ব্যক্তিদের গুনাবলী উল্লেখ করে পবিত্র কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে-'হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। আল্লাহর পথে যারা নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পার না। আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করবো। তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে— যারা তাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। এরাই তারা যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়, আর এরাই সৎপথে পরিচালিত।' (বাকারা, ২: ১৫৩-১৫৭)

মুমিন ব্যাক্তির পরকাল

মুমিন ব্যক্তি পরকালে সফলতার সাথে আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা হিসেবেই উত্তোলিত হবে। মুমিনদেরকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দা সাব্যস্ত করে তাদের গুণাবলি উল্লেখ করে পবিত্র কুরআনে বলেন-‘রহমান এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদেরকে যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্বোধন করে, তখন তারা বলে সালাম এবং তারা রাত্রি অতিবাহিত করে তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশে সিজদাবনত হয়ে ও দণ্ডায়মান থেকে এবং তারা বলে ‘হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের হতে জাহান্নামের শাস্তি বিদূরিত কর, তার শাস্তি তো নিশ্চিত বিনাশ', নিশ্চয়ই তা অস্থায়ী ও স্থায়ী আবাস হিসাবে নিকৃষ্ট। আর যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না. কার্পণ্যও করে না বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায় এবং তারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো ইলাহকে ডাকে না । আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যে এগুলো করে সে শাস্তি ভোগ করবে । কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়। তারা নয় যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের পাপ পরিবর্তন করে দিবেন পুণ্যের দ্বারা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যে ব্যক্তি তওবা করে ও সৎকর্ম করে সে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অভিমুখী হয় এবং যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হলে স্বীয় মর্যাদার সঙ্গে তা পরিহার করে চলে এবং যারা তাদের প্রতিপালকের আয়াত স্মরণ করিয়ে দিলে তার প্রতি অন্ধ ও বধিরসদৃশ আচরণ করে না এবং যারা প্রার্থনা করে, “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতি দান কর যারা হবে আমাদের জন্য ময়নপ্রীতিকর এবং আমাদেরকে কর মুত্তাকীদের জন্য অনুসরণযোগ্য। তাদেরকে প্রতিদান দেওয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষ যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল, তাদেরকে সেখানে অভ্যর্থনা করা হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে তা কত উৎকৃষ্ট। (ফুরকান, ২৫ : ৬৩-৭৬) দুনিয়ার বন্দেগি জীবন পরিচালনায় মুমিনদেরকে কতিপয় দিকনির্দেশনা ও করণীয় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন-“হে মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের নিকট কোনো বার্তা আনয়ন করে, তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, পিছে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে বস এবং পরে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদেরকে অনুতপ্ত হতে হয়।' (হুজুরাত, ৪৯ : ৬)

মুমিনের সামাজিক জীবন

মুমিনদের পারস্পরিক সামাজিক জীবন পরিচালনায় কতিপয় আচার-আচরণকে নিষিদ্ধ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন- হে মুমিনগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর কোনো নারীকেও যেন উপহাস না করে কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি মন্দ। যারা তওবা না করে তারাই যালিম।' (হুজুরাত, ৪৯ : ১১) পরের আয়াতেই আল্লাহ তায়ালা অনুমান থেকে দূরে থাকা, অপরের গোপন বিষয় সন্ধান ও গীবত না করা প্রভৃতি বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে বলেন-“হে মুমিনগণ! তোমরা অত্যধিক অনুমান হতে দূরে থাক; কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণ্যই মনে কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।' (হুজুরাত, ৪৯ : ১২) মুমিনগণ একইরূপ আত্মার অধিকারী হতে হবে। একজন মুমিন যখন দুঃখ দীনতায় পড়বে, তখন অন্য মুমিন ভাইকে সে ব্যথা অনুভবের মাধ্যমে তার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসতে হবে। যেমনিভাবে শরীরের এক অঙ্গ আঘাতপ্রাপ্ত হলে পুরো শরীরই বিনিদ্র রজনী কাটায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রসঙ্গে বলেন-‘সমস্ত মুমিন একই ব্যক্তিসত্তার মতো। যখন তার চোখে যন্ত্রণা হয়, তখন তার গোটা শরীরই তা অনুভব করে। যদি তার মাথাব্যথা হয় তাতে তার গোটা শরীরই বিচলিত হয়ে পড়ে। (মুসলিম : ৪৬৮৭) মুমিনদের সকল কাজ একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিবেদিত, প্রদর্শনেচ্ছা কিংবা পার্থিব বিনিময় পাওয়া তাদের কাম্য নয়। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে- তারা কর্তব্য পালন করে এবং সে দিনের ভয় করে, যে দিনের বিপত্তি হবে ব্যাপক। আহারের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত, ইয়াতিম ও বন্দীকে আহার্য দান করে এবং বলে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি, আমরা তোমাদের নিকট হতে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়। আমরা আশংকা করি আমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের। পরিণামে আল্লাহ তাদেরকে রক্ষা করবেন সে দিবসের অনিষ্ট হতে এবং তাদেরকে দিবেন উৎফুল্লতা ও আনন্দ।' (ইনসান, ৭৬ : ৭-১১)

মুমিন ব্যাক্তির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

মুমিন জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি জীবদ্দশায় মুমিন বান্দা যে কাজই করবে কিংবা যে কাজ করা থেকে বিরত থাকবে তার সবই হতে হবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘বলো, আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশে।' (আনআম, ৬ : ১৬২-১৬৩) পরকালের মর্মন্তুদ শাস্তি হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদেরকে একটি ব্যবসার সন্ধান দিয়েছেন। ব্যবসাটি কি? সে সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে—‘হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসার সন্ধান দিব যা তোমাদেরকে রক্ষা করবে মর্মন্তুদ শাস্তি হতে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে!' (সাফ্ট, ৬১ : ১০-১১ ) আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন যেমন মুমিন জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য তেমনই আল্লাহর পথে জীবন ও সম্পদ বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে অর্জিত হয় মুমিন জীবনের চূড়ান্ত সফলতা। তাদের পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের নিকট হতে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন, তাদের জন্য জান্নাত আছে এর বিনিময়ে।' (তওবা, ৯ : ১১১ ) মুমিন জীবনে নিজের প্রবৃত্তির দাসত্ব করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে বিরত না থাকতে পারলে প্রকৃত ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করা হবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন-‘তোমাদের মধ্যে কেউ আকাঙ্ক্ষিত মানের মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে নিজের প্রবৃত্তিকে আমার আনীত বিধানের অধীন করে। (আল ইবানাতুল কুবরা লি ইবনে বাত্তাহ)

মুমিন ব্যাক্তির আখলাক ও চরিত্র

আখলাক চরিত্রে মুমিন ব্যক্তিকে হতে হবে সর্বোত্তম। সামাজিক অনাচার- ব্যভিচারমূলক কার্যকলাপ থেকে সর্বদা নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নিজ পরিবারের প্রতি বেশি বেশি ভালোবাসা পোষণ করতে হবে এবং তাদের প্রতি সর্বদা সহানুভূতিশীল থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন-‘ঈমানের দিক হতে পরিপূর্ণ মুমিন হলো সেই ব্যক্তি, যার আখলাক চরিত্র উত্তম এবং তার নিজ পরিবারের প্রতি অধিক সহানুভূতিশীল।' (তিরমিযি : ২৫৩৭, মুসনাদে আহমাদ : ২৩০৭৩) মুমিন ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন বলেই তিনি তাঁর এই প্রিয় বান্দাকে কখনো সচ্ছলতা দেন, কখনো দরিদ্রতা ও অসচ্ছলতায় নিমজ্জিত করার মাধ্যমে তাঁর প্রতি নির্ভরতা, ভালোবাসা ও আনুগত্যের পরীক্ষা করেন। আর মুমিন বান্দা আল্লাহ তায়ালার কাছে সচ্ছল অবস্থায় শুকরিয়া জ্ঞাপন এবং দারিদ্র্য বা অসচ্ছল অবস্থায় ধৈর্যধারণের মাধ্যমে সাহায্য কামনা করে । রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন-‘মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর প্রকৃতির হয়ে থাকে। তার সকল অবস্থা ও কাজই কল্যাণকর, আর এ সৌভাগ্য মুমিন ছাড়া আর কেউ লাভ করতে পারে না। সচ্ছল অবস্থাতে সে যেমনিভাবে শুকরিয়া আদায় করে তেমনিভাবে দারিদ্র্য, অসুস্থতা এবং দুঃখ-কষ্টে পড়লেও সে ধৈর্যধারণ করে এ উভয় অবস্থাই তার জন্য কল্যাণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। (মুসলিম : ৫৩১৮) মুমিন বান্দা তার কৃত পাপ কাজের ব্যাপারে সর্বদাই আল্লাহ তায়ালার শাস্তির ব্যাপারে তটস্থ থাকে, যার ফলে তার দ্বারা পাপের পুনরাবৃত্তি ঘটে না। বিপরীতে ঈমানবিহীন ব্যক্তি তার পাপকে কোনো কিছুই মনে করে না । অথচ আল্লাহ তাকে দুনিয়াতে কতক শাস্তি প্রদান করে থাকেন যাকে সে সাময়িক দুর্ঘটনাই মনে করে থাকে। আর পরকালে তার জন্য তো মহাশাস্তি অপেক্ষমাণ রয়েছেই। মুমিন ব্যক্তি ও পাপিষ্ঠ ব্যক্তির মানসিক পার্থক্য তুলে ধরে প্রখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ( রাদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু ) বলেন-'নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি নিজের গুনাহসমূহকে এমন দৃষ্টিতে দেখে যেন সে একটি পাহাড়ের নীচে বসে আছে, আর পাহাড়টি তার উপর ধসে পড়ার আশংকা করছে। পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গুনাহসমূহকে মক্ষিকার মত মনে করে যা তার নাকের উপর বসলো সে তা এভাবে তাড়িয়ে দিল। আবু শিহাব (রাহিমাহুল্লাহ তায়ালা) ব্যাখ্যাস্বরূপ নিজের নাকের সামনে হাত নেড়ে বুঝিয়ে বলেন।' (বুখারী : ৫৮৩৩) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এর প্রদর্শিত বিধি-বিধান নিজের মনমতো কিংবা সুবিধামতো কিছু পালন করা আর কিছু পালন না করা মুমিন ব্যক্তির স্বভাব নয়। মুমিন ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য মেনে নেয়, সে শয়তানের পদাংক অনুসরণ করে না। কেননা আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন-‘হে মুমিনগণ! তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (বাকারা, 2 : ২০৮)

পরিশেষে

আল্লাহ সুবহানাহ তায়ালা ও তাঁর প্রিয় রাসূল যে পথ বাতলে দিয়েছেন সেটাই মুমিনের পথ। পরিপূর্ণ জীবনবিধান ইসলামের কিছু নির্দেশনা নিজের ইচ্ছে মতো মানা আর কিছু নির্দেশনা না মানা মুমিন জীবনের কর্ম নয়। দুনিয়ার কণ্টকাকীর্ণ পথে দিগভ্রান্ত না হয়ে আল্লাহ তায়ালার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া এবং সুস্থ ও অসুস্থ সর্বাবস্থায় আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া জ্ঞাপন ও তাঁর সাহায্য কামনা করার মাধ্যমেই তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন কিংবা পরকালীন সফলতা লাভ সম্ভব।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url